শীতকালের জনপ্রিয় কিছু পিঠার নাম ও তৈরীর প্রণালী সম্পর্কে জেনে নিন
শীতকালের জনপ্রিয় কিছু পিঠার নাম ও তৈরীর প্রণালী সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেলটির মধ্যে আমরা সম্পূর্ণ উল্লেখ করব। শীতকাল এর সময় আর বাসায় পিঠাপুরি হবে না এমনটা কি কখনো সম্ভব।
তবুও যতগুলি জানি এবং সহজ সে সকল পিঠার নাম ও পিঠা বানানোর কৌশল গুলো এখানে উল্লেখ করা হলো। পিঠা বানানোর কাজটি অনেকের কাছেই অনেক বেশি কঠিন মনে হয়ে থাকে। তাদের জন্যই আজকের আমাদের এই পোস্টটি। আজকের এই পোষ্টের মধ্যে আমরা শীতকালীন সময়ের জনপ্রিয় কিছু পিঠার সহজ রেসিপি সম্পর্কে বলবো এবং সেই পিঠাগুলোর ছবি উল্লেখ করব।
সূচিপত্রঃ শীতকালের জনপ্রিয় কিছু পিঠার নাম ও তৈরীর প্রণালী
- ভাপা পিঠা তৈরির প্রণালী
- চিতই পিঠা তৈরির প্রণালী
- কুলি পিঠা তৈরির প্রণালী
- পুলি পিঠা তৈরির প্রণালী
- পাটিসাপটা পিঠা তৈরির প্রণালী
- পাকান পিঠা তৈরির প্রণালী
- তালের পিঠা তৈরির প্রণালী
- বিভিন্ন প্রকার নাড়ু তৈরির প্রণালী
- বিভিন্ন প্রকার ক্ষীর ও ফিন্নি তৈরির প্রণালী
- লেখকের শেষ কথা শীতকালীন পিঠা সম্পর্কে
ভাপা পিঠা তৈরির প্রণালী
ভাপা পিঠা খুবই প্রচলিত একটি পিঠা আমাদের দেশে। এটি ছোট বড় আমরা সকলেই চিনি এবং রাস্তার ধারেও বিক্রি হতে দেখে থাকি। ভাপা পিঠা তৈরির জন্য সেদ্ধ ও আতব চালের গুড়া প্রয়োজন, ৫০০ গ্রাম গুড় প্রয়োজন এক কাপ নারকেল কুড়ানো এবং লবণ আধা চা চামচ ও পানি সামান্য পরিমাণে। পিঠার জন্য প্রয়োজন ছোট দুইটি বাটি এবং দুই টুকরো পাতলা কাপড়।
চালের গুড়া একটু পানি দিয়ে ঝুরঝুরা করে মাখিয়ে নিয়ে বাঁশের চালনীতে করে চেলে নিতে হবে। এরপরে বাটিতে অল্প চালের গুড়া দিয়ে তার মাঝখানে গর্ত করে গুড় নারকেল, বাদাম, কিসমিস আপনার পছন্দমত দিয়ে উপরে চালের গুড়া দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
এরপর পাতলা কাপড় ভিজিয়ে পিঠা ঢেকে দিয়ে বাটির নিচ পর্যন্ত কাপড় ধরে বাটিটি উল্টে দিয়ে ফুটন্ত পানির উপর ছিদ্র করা ঢাকনার মাঝে বসিয়ে বাটিটি উঠিয়ে পিঠার কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। পাঁচ ছয় মিনিট পর পিঠা উঠিয়ে পরিবেশন করতে পারবেন। এভাবেই একের পর এক ভাপা পিঠা বানানো খুবই সহজ।
খেজুরের রসের ভাপা পিঠাঃ খেজুরের রসের ভাপা পিঠা বানানোর জন্য প্রয়োজন ঘন খেজুরের রস আধা কাপ, পাতলা খেজুরের রস দুই কাপ, মিহি কোরানো নারকেল এক কাপ, সেদ্ধ চালের গুড়া দুই কাপ এবং আতপ চালের গুঁড়া আধা কাপ, পানি এক কেজি, পাতলা পরিষ্কার কাপড় দুই টুকরা ভাপা পিঠার হাড়ি এবং বাটি।
আরও পড়ুনঃ শীতকালে শিশুর যত্ন নিয়ে জেনে নিন ১০টি কার্যকরী টিপস
সেদ্ধ আতপ চালের গুড়া লবণ ও ঘন রস আস্তে আস্তে দিয়ে মাখতে হবে যাতে পুরো মিশ্রণটি ঝরঝরে থাকে। অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যাতে মিশ্রণটি বেশি শক্ত বা পাতলা না হয়ে যায়। তারপর একটা মোটা চাল্লিতে মিশ্রণটুকু চেলে নিতে হবে এই মিশ্রণে হালকা হাতে নারকেল মেশাতে হবে।
হাড়িতে পানি ফুটে উঠলে বাটিতে হালকা হাতে চেপে পিঠা বসাতে হবে। এবার বাটি কাপড়ের মুড়িয়ে ভাপে বসে চটজলদি কাপড় একটু ফাক করে বাটি উঠিয়ে দিয়ে আর একটি পিঠা তৈরি করতে হবে। সব পিঠা বানানো হলে ঠান্ডা করে উপরে ঠান্ডা পাতলা রসে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
শাহী ভাবা পিঠা তৈরিঃ শাহী ভাবা পিঠা তৈরির জন্য সেদ্ধ চালের গুড়া দুই কাপ পোলাওয়ের চালের গুড়া ২ কাপ, খেজুরের গুড়, কাপ নারকেল করানো দুই কাপ, দুধের ক্ষীর এক কাপ, মালাই এক কাপ, কিসমিস ২ টেবিল চামচ, বাদাম এক টেবিল চামচ। চালের গুড়ায় স্বাদমতো লবণ পরিমাণ মত কুসুম গরম পানি এমনভাবে মেশাতে হবে যেন চালের গুড়ার মধ্যে কোন দলা না থাকে।
চালের গুড়া বাঁশের চালনিতে চেলে নিতে হবে। গুড়ায় অর্ধেক নারকেল কোরানো মেশাতে হবে। একটি বাটিতে অল্প কিছু চালের গুড়া, কিছু নারকেল মাখানো চালের গুড়া দিয়ে এর উপর আবার নারকেল মাখানো চালের গুড়া দিয়ে দুধের ক্ষীর পেস্তা বাদাম কিসমিস আবার কিছু চালের গুড়া তার ওপরে মিশিয়ে একটি পাতলা ভেজা কাপড় দিয়ে ধরে গরম পিঠার হাড়ির মুখে রেখে বাটি উল্টে দিতে হবে।
এরপর তা ঢেকে দিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর কাপড় সহ পিঠা তুলে কাপড় থেকে ছাড়িয়ে রাখতে হবে। পিঠার উপরে মালাই পেস্তা বাদাম কুচি দিয়ে গরম গরম পরিবেশন করতে হবে।
চিতই পিঠা তৈরির প্রণালী
পারফেক্ট চিতই পিঠা পিঠার ভেতরের অংশ হয় জালি জালি এবং নরম এছাড়াও একদিকে নরম তুলতুলে হলেও আরেক দিক হয় হালকা মচমচে। কিভাবে বানাবেন এমন পিঠা আসেন জেনে নেই তাহলে। এর জন্য প্রথমে দুই কাপ চালের গুঁড়া নিন, একটি বড় বাটিতে বাজার থেকে কিনে আনা চালের গুড়া ব্যবহার করতে পারেন পিঠা তৈরির জন্য।
এর সঙ্গে মেশাতে হবে আধা চা চামচ লবণ ভালো করে মিশিয়ে দুই কাপ গরম পানি দিন। গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে নিন চালের গুড়া। একটু আঠালো মনে হলে আর পানি দেবেন না এক থেকে দেড় মিনিটের জন্য মিশ্রণটি একেবারে নরম হয়ে যাবে দুই থেকে চার মিনিট পর্যন্ত ঢেকে রাখুন পিঠার বাটিটি।
চুলার জাল বাড়ি একটি লোহার করায় গরম করুন একটি পাতলা কাপড়ের তেল আর পানির মিশ্রণ নিয়ে কড়াই ঘষে নিন। এতে খুব সহজেই পিঠা করায় থেকে উঠে আসবে। একটি গর্তয়ালা চামচের সাহায্যে পিঠার বেটার নিয়ে কড়াইয়ে দিয়ে দিন। কড়াইয়ে ঢেকে চুলার জাল মিডিয়াম হাই করে দিন। আড়াই থেকে তিন মিনিটের জন্য অপেক্ষা করুন এরপর করায় থেকে নামিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।
দুধ চিতই পিঠা তৈরির প্রণালীঃ এই পিঠা তৈরির জন্য প্রথমে প্রয়োজন চালের গুড়া চার কাপ, দুধ এক লিটার, গুড় ২ কাপ, করানোর নারকেল আধা কাপ। প্রথমে দুধ জ্বাল দিয়ে ঘন করে আলাদা গুঁড়ের শিরা তৈরি করে রাখবেন। এবার হালকা গরম পানিতে গুড়া পাতলা গুলা তৈরি করে মাটির খোলায় কাঁপে করে গোলা দিয়ে পিঠা তৈরি করতে হবে। এবং গুড়ের রসে ভিজিয়ে ওপরে নারকেল ছড়িয়ে দিতে হবে।
রসের চিতই পিঠা বানানোর প্রণালীঃ প্রথমেই প্রয়োজন চালের গুড়া চার কাপ, দুধ এক লিটার, গুড়, কুড়ানো নারকেল দুই কাপ। প্রথমে দুধ জাল দিয়ে ঘন করে আলাদা করে গুড়ের শিরা তৈরি করে রাখতে হবে। এরপর হালকা গরম পানিতে গুড়ের পাতলা গুলা তৈরি করতে হএর। এরপর মাটির খোলায় গোলা ঢেলে পিঠা তৈরি করতে হবে। পিঠা রসে ভিজিয়ে রাখবেন সারারাত এরপর সকাল বেলায় উঠে মজাদার পিঠা পরিবেশন করতে পারবেন।
ডিমের চিতই পিঠা তৈরির প্রণালীঃ ডিমের চিতই পিঠা তৈরির জন্য প্রয়োজন চারটি ডিম, এক কাপ চাল, এক চামচ লবণ ও ফুটন্ত গরম পানি। দেড় কাপ চালের গুড়া ফুটন্ত পানিতে দিয়ে ব্লেন্ড করে একটি মাটির তাওয়া গরম করে তেল দিয়ে মুছে নিতে হবে। তারপর অল্প ব্লেন্ড করা চালের গুরা দিয়ে একটি ডিম ভেঙ্গে অল্প লবণ ছিটিয়ে ঢেকে দিতে হবে। এরপর ৫ থেকে ৭ মিনিট অপেক্ষা করার পরে পিঠাটি তুলে পরিবেশন করতে পারবেন।
কুলি পিঠা তৈরির প্রণালী
সিদ্ধ কুলি পিঠা তৈরির জন্য আতপ চালের গুড়া প্রয়োজন দুই কাপ, খেজুরের গুড় প্রয়োজন আপনার পরিমাণ মতো এবং কোরানও নারকেল এক কাপ। আতপ চালের গুঁড়া হালকা ভেজে পরিমাণ মতো পানি দিয়ে কাই করে নিতে হবে। করয়ে গুড় ও নারকেল একসঙ্গে চুলায় দিয়ে জাল দিতে হবে।
এরপর মিশ্রণটি শুকিয়ে আঠা আঠা হলে নামাতে হবে। খামির হাতে নিয়ে গোল গোল করে বেলে মাঝখানে পুর দিয়ে অর্ধচন্দ্রাকার দিয়ে মুখটি বন্ধ করে দিতে হবে। এভাবে সব পুলি পিঠা বানিয়ে ভাবে সিদ্ধ করে ঠান্ডা করে পরিবেশন করতে হবে।
ঝাল কুলি পিঠা তৈরির প্রণালীঃ ঝাল কুলি পিঠা তৈরির জন্য চালের গুড়া তিনকাপ, পুরের জন্য হাড়ছাড়া মুরগির মাংস ২ কাপ, মরিচের গুঁড়া আধা চা চামচ, কাঁচামরিচ কুচি চার থেকে পাঁচটি, পেঁয়াজ কিউব করে কাঁটা দুই কাপ, গুড়া দুধ এক টেবিল চামচ, হলুদ গুঁড়া আধা চা চামচ ও পানি পরিমাণ মতো। লবণ পরিমাণ মতো এবং এলাচ তিন থেকে চারটা।
প্রথমে পুর তৈরি করার জন্য পেয়াজ ভেজে মাংসের কিমা ও সব মশলা দিয়ে ভুনা করে নিতে হবে। এরপর পানিতে লবণ দিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে তাতে চালের গুড়া দিয়ে খামির তৈরি করতে হবে। এবং ওই খামির থেকে রুটি তৈরি করে তার ভেতর মাংসের পুর দিয়ে তেলে ভেজে নিতে হবে। এরপর ঠান্ডা করে পরিবেশন করতে পারবেন। মজাদার ঝাল কুলি পিঠা।
ভাজা কুলি পিঠা তৈরির প্রণালীঃ ভাজা কুলি পিঠা তৈরির জন্য আতপ চালের গুড়া হালকা ভেজে পরিমাণ মতো পানি দিয়ে কাই করে নিতে হবে। কড়াইয়ে গুড় ও নারকেল একসঙ্গে চুলায় দিয়ে জাল দিতে হবর। মিশ্রণটি শুকিয়ে আঠা আঠা হয়ে গেলে সেটিকে খামির হাতে নিয়ে গোল গোল করে পাতলা করে বেলে মাঝখানে পুর দিয়ে হাফ সার্কেল করে চাপ দিয়ে মুখ বন্ধ করে দিতে হবে। এই পিঠা বিভিন্ন প্রকার হালুয়া এবং ভাজি দিয়েও করা যায়।
পুলি পিঠা তৈরীর প্রণালী
প্রথমে আসি তিলের পুলি পিঠার কাছে। তিলের পুলি পিঠা বানানোর জন্য প্রথমেই আমাদের প্রয়োজন চালের গুড়া ২ কাপ, ঘি এক থেকে দুই টেবিল চামচ, নারকেল কুড়ানো দুই কাপ, লবণ পরিমাণ মতো সাদা তিল আধা কাপ, গুড় দেড় কাপ এবং পানি পরিমাণ মতো। লবণ ঘি এবং পানি একসঙ্গে চুলায় দিতে হবে এবং মিশ্রণটি ফুটে উঠলে চালের গুড়া দিয়ে এটিকে কায় বানাতে হবে।
তেল শুকনা খোলাই তেলে নিতে হবে গুড় ও নারকেল চুলায় দিয়ে জাল দিতে হবে। এবং এটি চটচটে হলে তিল দিয়ে নামাতে হবে। এরপর খামির ইচ্ছামত ভাগ করে প্রতি ভাগে অর্ধচন্দ্রাকার বা ইচ্ছা মত আকার দিয়ে মুখ বন্ধ করে পুলি করতে হবে। এরপর ভাপে সেদ্ধ করে নিলেই হয়ে যাবে তিলের পুলি পিঠা।
ছানার পুলি পিঠাঃ ছানার পুলি পিঠা বানানোর জন্য আমাদের প্রয়োজন আড়াইশো গ্রাম ছানা, কনডেন্স মিল্ক, ময়দা, বেকিং পাউডার, ভাজার জন্য তেল, চিনি, পানি। এ সকল কিছু পরিমাণ মতো একসাথে মিশিয়ে জাল দিয়ে একটি শিরা তৈরি করে নিতে হবে। এরপর ছানা কনডেন্স মিল্ক ময়দা বেকিং পাউডার এবং বড় এক টেবিল চামচ ঘি মিলিয়ে খুব করে ভালো করে মেখে মোলায়েম ডো বানাতে হবে।
এরপরে সেই ডো দিয়ে ছোট ছোট পুলি বানিয়ে হালকা গরম তেলে ভেজে নিতে হবে। ভাজা শেষে পিঠা গুলো শিরায় ভিজাতে হবে। এরপর মাওয়া বা গোলাপ পাপড়ি দিয়ে আপনার ইচ্ছামতো সাজিয়ে পরিবেশন করতে পারেন এটি খেতে খুবই মজাদার।
দুধপুলিঃ দুধপুলি খুবই জনপ্রিয় একটি পিঠা এর জন্য প্রয়োজন চালের গুড়া দুই কাপ দুধ দুই কাপ নারকেল একভাগের চার কাপ চিনি এক কাপ পানি দুই কাপ এবং সামান্য কিছু এলাচ। পানি ও চালের গুড়া। দিয়ে শক্ত ডু তৈরি করতে হবে এরপর ছোট ছোট বা ২/২ করে রুটি বেলে ভেতরে নারকেল দিয়ে ছোট ছোট পুলি তৈরি করে চুলায় দুধ জাল দিয়ে তাতে চিনি। চিনি ও এলাচ সহ পুলি দিয়ে তুলে নামিয়ে নিতে হবে।
পাটিসাপটা তৈরির প্রণালী
ক্ষীরে ভরা পাটিসাপটা অনেকেই পছন্দ করেন। বেশিরভাগ মানুষেরই পছন্দের তালিকায় থাকে এই পিঠা। ক্ষীরে ভরা পাটিসাপটা তৈরির জন্য প্রয়োজন আড়াইশো গ্রাম চালের গুড়া, এক কেজি গুড়, আড়াইশো গ্রাম ময়দা ৪ ভাগের একভাগ গুড় ভেঙ্গে এক কাপ নিয়ে পানিতে গুলে নিতে হবে গুড়ি ময়দা ওপর দিয়ে গোলা করতে হবে।
করায়ে সামান্য তেল মাখিয়ে নিতে হবে এরপর কড়াইয়ের মাঝে হাফ টেবিল চামচ বা এক টেবিল চামচ আটার গোলা নিয়ে কড়াইয়ের এর মধ্যে ঘুরিয়ে চারিদিকে গোল করে ছড়িয়ে নিতে হবে। এরপর পিঠার উপরের দিক শুকিয়ে এলে এবং পিঠার কিনারা কড়াই থেকে আলাদা হলে এর মাঝখানে এক টেবিল চামচ ক্ষীর দিয়ে রুটি টা মুড়িয়ে নামিয়ে নিতে হবে।
পাকান পিঠা তৈরির প্রণালী
পাকান পিঠা বানানোর জন্য কোন সিজন লাগে না। এই পিঠাটি সারা বছরে বানিয়ে খাওয়া যায়। পাকান পিঠা বানানোর জন্য প্রয়োজন চালের গুড়া আধা কেজি, খেজুরের গুড় ৫০০ গ্রাম, তেল আধা কেজি এবং আটা এক পোয়া পরিমাণের। খেজুরের গুড় আর এক গ্লাস পানি জাল দিয়ে নিতে হবে তারপর এতে চালের গুড়া ও আটা দিয়ে ঘন করে মেশাতে হবে।
এরপর করায়ে তেল দিয়ে তেল গরম হলে এর মধ্যে এক চামচ করে পিঠারোলা ছেড়ে দিতে হবে। এটা ফুলে উঠলেই তৈরি হয়ে যাবে তেলেভাজা পাকান পিঠা। তবে এই পিঠা বানানোর জন্য সতর্কীকরণ একটি বিষয় হলো এর গোলা বেশি পাতলা বা বেশি গাঢ় হলে পিঠা ভালো হয় না সেদিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে।
সুন্দরী পাকান পিঠার প্রণালীঃ এই পাকান পিঠাটি বানানোর জন্য প্রথমে প্রয়োজন এক লিটার দুধ, একটি কুড়ানো নারকেল, ময়দা এক কেজি, তেল প্রয়োজনমতো এবং অল্প লবণ, দুই কাপ পানি, তেজপাতা, দারচিনি। এ সকল কিছু একসঙ্গে জাল দিয়ে একটি শিরা বানাতে হবে দুধ জালদিয়ে ফুটে উঠলে মিহি বাটা নারকেল লবণ ও ময়দা দিয়ে খামির তৈরি করতে হবে।
এরপর ভালো করে মাখিয়ে পুরো করে বেলে বিস্কুট কাটার দিয়ে কেটে উপরে খেজুর কাটা অথবা ছুরি দিয়ে ডিজাইন করে সব পিঠা তৈরি করতে হবে। তারপর ডুবো তেলে ভেজে সেগুলোকে শিরায় ডুবাতে হবে। তাহলেই তৈরি হয়ে যাবে সুন্দরী পাকান পিঠা।
তালের পিঠা বা বড়া তৈরির প্রণালী
তালের পিঠা বা বড়া তৈরির জন্য আমাদের প্রয়োজন আটা দুই কাপ পরিমাণের, কনডেন্স মিল্ক এক কাপ, গুড়া দুধ, খাবার সোডা এক চিমটি পরিমাণের, বেকিং পাউডার এক টেবিল চামচ, আধা কাপ চিনি কোরানো নারকেল আধা কাপ, এক চা চামচ লবণ পানি এবং পরিমাণ মতো তেল। উপরের সব উপকরণ গুলো একসঙ্গে মাখিয়ে আধা ঘন্টা রাখতে হবে।
আরও পড়ুনঃ পাথরকুচি পাতার উপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম
এরপর একটি করোয়ে পরিমাণ মতো তেল গরম করে তার মাঝে মাখানো উপকরণ গুলো হাতে মুঠোতে নিয়ে ছোট ছোট গোল করে সেই ডুবো তেলে ভেজে নিতে হবে। তাহলে খুবই সহজেই হয়ে যাবে তালের বড়া বা পিঠা। আমার কাছে সবচেয়ে সহজ মনে হয় এই পিঠাটি বানানো।
তালের রুটি বানানোর উপকরণঃ তালের রুটি বানানোর জন্য ঘনতাল দুই কাপ, নারকেল করানো এক কাপ, আটা ২ কাপ, লবণ, গুঁড়া দুধ আধা কাপ, এবং ঘি ২ টেবিল চামচ। এই সকল উপকরণগুলো একসঙ্গে মাখিয়ে একটি দুটি বানানোর খামির তৈরি করতে হবে। এরপর কলা পাতায় ঘি বা তেল মাখিয়ে রুটির মত বিছিয়ে নিতে হবে। এরপর আরও একটি কলাপাতা দিয়ে রুটি ঢেকে দিতে হবে। পাতাসহ রুটি গরম তাওয়াই দিয়ে ঢেকে দিতে হবে অল্প আচে পাতা পোড়া পোড়া হওয়া পর্যন্ত সেকে নিতে হবে।
তালের কেক তৈরির প্রণালীঃ তালের কেক বানানোর জন্য আমাদের প্রয়োজন প্রথমে এক কাপ চেলে নেওয়া ময়দা, হাফ কাপ সাদা তেল, গুড়ো করা চিনি হাফ কাপ, তালের মিশ্রণ, এক চা চামচ বেকিং পাউডার, দের চা চামচ বেকিং সোডা, ছয়ফোঁটা ভেনিলা এসেন্স, ৫ চা চামচ ড্রাই ফ্রুত, টুকরো করে কাটা এবং একটি ইনোর প্যাকেট।
প্রথমেই ময়দা ভালো করে চেলে নিতে হবে। এরপর চিনি গুঁড়ো করে রাখতে হবে তাল ও তালের মিশ্রণ ভালো করে ছেঁকে নেওয়ার তাল আর তাল-পাল্প একটি পাত্রে নিয়ে খুব ভালো করে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। তারপর এরমদ্ধে গুড়ো করা চিনি মেশাতে হবে। শেষে ময়দা, বেকিং পাউডার মেশাতে হবে। মিশ্রিত সবকিছু ব্লেন্ডারের সাহায্যে খুব ভালো করে ব্লেন্ড করে একটি ব্যাটার তৈরি করে নিতে হবে।
এরপর এর মধ্যে একটি ইনো মেশাতে হবে। এরপর চুলাই একটি করায় বসিয়ে ১০ মিনিট গরম করে নিতে হবে। তারপর মাঝে একটি স্ট্যান্ড বসিয়ে দিতে হবে এবার কেক তৈরির বলে মিশ্রণটি ঢেলে দিতে হবে আর একটু সেট করে নিতে হবে। এরপর কড়াইতে বসিয়ে দিতে হবে গ্যাসের ফ্লেম লো করে ৪০ থেকে ৫০ মিনিট রেখে দিতে হবে মাঝে চাপা খুলে ড্রাই ফ্রুটস দিয়ে দিতে হবে।
সময় শেষ হলে একটা টুথপিক দিয়ে কেকটি চেক করে কেকটা চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা হওয়ার জন্য রাখতে হবে। এরপর আপনি ঠান্ডা কেক পরিবেশন করতে পারেন।
বিভিন্ন প্রকার নাড়ু তৈরির প্রণালী
নাড়ু কারনা পছন্দ নারুর মধ্যে সবথেকে বেশি পছন্দ হলো তিলের ও নারকেলের নাড়ু আসুন আজকে তিল ও নারকেল বাদেওউ আরো কিছু নাড়ুর রেসিপি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। প্রথমেই আসি তিলের নাড়ু তিলের নাড়ু বানানোর জন্য প্রয়োজন খোসা ছাড়ানোর তিল ভাজা আধা কাপ, নারকেল কোড়া চার কাপ এবং আখের গুড় চার কাপ।
আখের গুড় আর নারকেল কোড়া একসঙ্গে মিশিয়ে করাইয়ে মাঝারি আচে গুর নারকেলের মিশ্রণটিকে ভালোভাবে নাড়তে হবে। মিশ্রণটি আঠালো হয়ে আসলে এর মাঝে তিল দিয়ে নাড়তে হবে। নারকেল গুড় তিল ভালোভাবে মিশে গেলে আগুন থেকে নামিয়ে ছড়ানো থালায় তেল মাখিয়ে মিশ্রণ ঢেলে নাড়ু বানাতে হবে।
নারকেলের নাড়ু তৈরির প্রণালীঃ নারকেলের নাড়ু তৈরির জন্য প্রথমে এক কাপ চাল ভেজে গুড়া করে নিতে হবে তারপর একটি পেনে দুই কাপের মতো কোড়া নারিকেল, এক কাপ চিনি ও কয়েকটি গুর বা চিনি দিয়ে জাল দিতে হবে। এরপর মিশ্রণটির পানি টেনে এলে চালের গুড়া দিয়ে দিতে হবে গরম গরম অবস্থায় গোল গোল করে নাড়ু বানাতে হবে উপরে চালের গুড়া ছড়িয়ে দিতে হবে নাড়ু বানানো শেষে।
তিলের নাড়ু তৈরির প্রণালীঃ তিলের নাড়ু তৈরির জন্যই প্রথমে প্রয়োজন আমাদের এক কাপ তিল, আধা কাপ পানি এক কাপ গুড় ও বাদাম ভাজা পরিমাণ মতো। প্রথমেই আমাদের যে কাজটি করতে হবে সেটি হল তিল হাল্কা করে ভেজে নিতে হবে। এরপর চুলায় পানি ও গুড় দিতে হবে পানি ও গুড়ের মিশ্রণটি ঘন হয়ে এলে এর মধ্যে তিল ও বাদাম দিয়ে নাড়তে হবে।
নামানোর সময় হয়ে এলে মিশ্রণটির নামিয়ে গোল গোল করে নাড়ু বানিয়ে ফেলতে হবে। হালকা গরম থাকা অবস্থায় নাড়ু বানাতে হবে কেননা এটি ঠান্ডা হয়ে গেলে আর কোনরকম সেফ আসে না। নাড়ু ঠান্ডা হলে কাচের বৈয়ামে ভরে রাখলে নাড়ু ভালো থাকে দীর্ঘদিন।
চিড়ার নাড়ু তৈরির প্রণালীঃ চিড়ার নাড়ু তৈরির জন্য প্রয়োজন ২৫০ গ্রাম ভাজা চিড়া, খেজুরের গুড় ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম, কোড়য়া নারকেল এক কাপ পরিমাণে, এলাচ গুড়ো সামানর, ভাজা জিরা সামান্য এবং এক থেকে দুই টেবিল চামচ ঘি। প্রথমে ঘুরে সিকি কাপ পরিমাণ পানি ও ঘি দিয়ে চুলায় দিতে হবে।
গুড় ফুটে ঘন হয়ে এলে এর মধ্যে এলাচ গুঁড়া ও ভাজা জিরা গুঁড়া দিতে হবে মিশ্রণটি আঠালো হয়ে এলে ভাজা চিড়া দিয়ে আরও কিছুক্ষণ চুলাই নাড়তে হবে। চিড়া গুড়ের মিশ্রণ ভালো করে মিশে গেলে নামিয়ে নিতে হবে। ঠান্ডা হওয়ার আগে হাতে একটু ঘি মাখিয়ে গোল গোল করে নাড়ু তৈরি করে পরিবেশন করতে পারবেন চিড়ার মজাদার নাড়ু।
বিভিন্ন প্রকার ক্ষীর ও ফিন্নি তৈরির প্রণালী
পিঠা বাদে যে কোন মিষ্টি খাবার খেতে সবাই পছন্দ করেন সেই মিষ্টি খাবারের মধ্যে অন্যতম হলো ফিন্নি বা ক্ষীর। ক্ষীর খেতে সবাই ভালবাসে বিশেষ করে যারা মিষ্টি খাবার পছন্দ করেন তাদের কাছে পছন্দের একটি নাম হল ক্ষীর। চলুন জেনে নেওয়া যাক ক্ষীর তৈরি রেসিপি। ক্ষির তৈরির জন্য প্রথমে প্রয়োজন এক লিটার দুধ, পোলাওয়ের চাল এক মুঠো পানিতে ভিজিয়ে রেখে আধাভাঙ্গা করে নেওয়া, গুর আধা কাপ পরিমাণ, মাওয়া আধা কাপ, নারিকেল কুড়ানো আধা কাপ এবং বাদাম পছন্দমত।
ক্ষির তৈরির জন্য প্রথমে দুধের সঙ্গে পানি মিশিয়ে জাল দিতে হবে। অল্প অল্প করে চাল দিয়ে নেড়ে মিশিয়ে নিতে হবে। চাল ও দুধের মিশ্রণ যেন দলা পাকিয়ে না যায় সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। এরপর এরমধ্যে নারকেল দিয়ে অল্প আচে সিদ্ধ করে নিতে হবে।
একটু পর পর নেড়ে দিতে হবে সেদ্ধ হয়ে এলে এক টেবিল চামচ চিনি দিয়ে গুর জাল করে মিশিয়ে দিতে হবে। গুড় মেশানোর পর ঘন হয়ে এলে মাওয়া মিশিয়ে নামিয়ে নিতে হবে। এরপর ঠান্ডা হলে এর মধ্যে কিসমিস বা বাদাম আপনার পছন্দমত দিয়ে পরিবেশন করতে পারবেন।
ফিন্নি তৈরির প্রণালীঃ বিয়ে বাড়ি বা ঈদের সময় সবারই প্রিয় শাহী ফিন্নি রেসিপি মিষ্টি খাবারের ভিতরে যে খাবার তাড়াতাড়ি বানানো যায় সেটি হল ফিন্নি। আসুন তাহলে ফিন্নি তৈরির সহজ রেসিপিটি সম্পর্কে জানা যাক। ফিন্নি বানানোর জন্য প্রথমেই প্রয়োজন ২ লিটার দুধ, পোলাও চাল আধা কাপ পরিমাণের, গুড়া দুধ এক কাপ, কন্ডেন্স মিল্ক এক কাপ, কাঠবাদাম কুচি ১০০ গ্রাম, কাজুবাদাম কুচি ১০০ গ্রাম, কিসমিস আপনার পছন্দমত, পেস্তা কুচি ৫০ গ্রাম, এলাচি চার থেকে পাঁচটা এবং দারুচিনি তিন থেকে চারটা।
ফিন্নি তৈরির জন্য প্রথমে পোলাওয়ের চাল ধুয়ে মিনিট বিশেক ভিজিয়ে রাখতে হবে। চাল ভিজে কিছুটা নরম হয়ে এলে আধাভাঙ্গা করে নিতে হবে। এরপর তরল দুধ হাড়িতে ঢেলে চুলায় জাল দিতে হবে এরপর এর মধ্যে এলাচি ও দারুচিনি দিয়ে দুটি মিশ্রণটিকে নাড়তে হবে। এর কিছুক্ষণ পর গুলিয়ে রাখা পাউডার দুধ ঢেলে দিতে হবে এই মিশ্রণটি ঘন হয়ে এলে চাল দিয়ে আবারো নাড়তে হবে কনডেন্সড মিল্ক দিয়ে।
এর মাঝে চিনির প্রয়োজন হবে না আপনি যদি আরও বেশি মিষ্টি খেতে চান তবে যোগ করতে পারেন। এরপরে ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট চুলার আঁচ লো করে জাল দিতে হবে। নামানোর সময় হলে কিসমিস নিতে হবে আপনি চাইলে ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করেও খেতে পারেন এতে বেশি সুস্বাদু লাগে।
লেখক এর শেষ কথা শীতকালীন পিঠা সম্পর্কে
শীতকালের সময় আর বাসায় পিঠাপুরি হবে না এমনটা কি কখনো সম্ভব? শীতকালীন সময়ে প্রতিটি ঘরে ঘরে পিঠা বানানোর যেন এক উৎসব ছেয়ে যায়। শীতকালীন সময়ের পিঠা বলতে শুধু ভাপা পিঠাই বুঝায় না শীতের পিঠায় রয়েছে আরও নানারকম পিঠা।
সবগুলোর নাম নিশ্চয়ই কেউ বলে শেষ করতে পারবে না। তবে শীতকালীন সময়ের জনপ্রিয় কিছু পিঠার নাম ও তৈরির প্রণালী সম্পর্কে বিস্তারিত আজকের এই আর্টিকেলটির মধ্যে সম্পূর্ণভাবে উল্লেখ করেছি। এবং ছবিও যুক্ত করা হয়েছে ইতিমধ্যে। আশা করছি আপনি আমাদের পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন।
লাইফস্টাইল সম্পর্কিত এমন আরো পোস্ট পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটের হোম পেজে ভিজিট করুন। আর আজকের আর্টিকেলটি নিয়ে কোন মন্তব্য থাকলে আমাদের কমেন্ট সেকশনে কমেন্ট করে জানাতে পারেন ধন্যবাদ।
অমৃতা ব্লগারের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url