শীতকালে শিশুর যত্ন নিয়ে জেনে নিন ১০টি কার্যকরী টিপস
শীতকালে শিশুর যত্ন নেওয়াটা খুবই প্রয়োজন। কেননা গরম শেষে যখন ঠান্ডা পরে অর্থাৎ শীতকাল চলে আসে তখন এই সময়টাই শিশুরা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে হুটহাট ঠান্ডা লাগা, জ্বর আসা এগুলো খুবই সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় এই সময়।
তবে এই সময়টা শিশুদের ক্ষেত্রে কিছু ছোট ছোট বিষয় মাথায় রেখে কাজ করলে বেশি
অসুস্থতা হওয়া থেকে রক্ষা করা যায়। শীতে শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কোন
বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন এবং শীতকালে শিশুর যত্ন কিভাবে নিবেন জেনে নিন তাহলে।
শীতকালে শিশুর যত্ন নিয়ে সূচিপত্র
- শীতকালে শিশুর যত্ন যেভাবে নিবেন
- শীতকালে নবজাতকের যত্ন
- শীতকালে শিশুর ত্বকের যত্ন
- শীতকালে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর খাবার
- শীতকালে বাচ্চাদের পোশাক
- শীতকালে শিশুর যত্ন সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর
- লেখকের শেষ কথা
শীতকালে শিশুর যত্ন যেভাবে নিবেন
শীতের সময় বাচ্চাদের দিকে খেয়াল রাখা এবং বাচ্চাদের যত্ন নেওয়া খুবই প্রয়োজনীয়। কেননা এই সময় ত্বক অনেক বেশি শুষ্ক হয়ে যায় বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও একই। অন্যান্য সময়ের তুলনায় শীতকাল শিশুদের জন্য একটু কষ্টকর ও অসহনীয় হয়ে ওঠে।
এই সময় জ্বর, পেট খারাপ, ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি সহ স্বাস্থ্যের বিভিন্ন সমস্যা
সহ নিউমোনিয়ায় পর্যন্ত ভুগতে দেখা দেয়। এছাড়া শীতে ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং নানা
ভাইরাল জ্বর ও বেশি হয়। তাই শীতকালে শিশুদের একটু বাড়তি যত্ন প্রয়োজন।
গরম পোশাক পরিধানঃ শীতে শিশুদের নিরাপদ রাখার প্রধান শর্ত হলো
গরম কাপড় পরিধান করানো। শীতকালের ঠান্ডা পরিবেশে শিশুকে শীতের পোশাক পরিয়ে গরম
রাখতে হবে। না হলে হঠাৎ ঠাণ্ডায় শিশুদের শরীরে সহ্য না করতে পারায় এক্ষেত্রে
শিশু অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। তাই অবশ্যই শিশুদের গরম কাপড় পরিধান করাতে হবে।
শীতের সময় গোসল করানোঃ এই সময় শিশুর গোসল কোন ভাবেই বন্ধ করা যাবে না বরং এই সময় হালকা গরম পানিতে
শিশুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। কেননা নিয়মিত গোসলের ফলে শরীর সুস্থ থাকে। শীতের
সময় অনেকে আছেন ঠান্ডার কারণে বাচ্চাদের গোসল করান না। এটি কখনোই করা উচিত নয়
এই সময় হালকা-কুসুম গরম পানিতে বাচ্চাদের গোসল করানো উচিত। গোসল করানোর পর নরম
সুতি কাপড় দিয়ে গা মুছে দিন।
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারঃ শীতের
সময় শিশুদের ত্বক খুবই শুষ্ক হয়ে যায়। শুধু শিশু নয় শিশু থেকে বড় সকলের শরীর
এবং ত্বক খুবই শুষ্ক এবং আর্দ্র হয়ে যায়। বিশেষ করে বাচ্চাদের প্রতিদিন গোসলের
পরে ত্বকে মশ্চারাইজার ব্যবহার করা প্রয়োজন।
শীতকালীন সময়ে শিশুর খাবারঃ
শীতকালীন সময়ে শিশুর খাবার নিয়ে অনেকের দুশ্চিন্তায় থাকেন এক্ষেত্রে এ সকল
জিনিসগুলো শিশু খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। শীতের সময় শিশুর খাবারে উপস্থিত
থাকা চাই পর্যাপ্ত ভিটামিন সি। এ ক্ষেত্রে মাল্টা, লেবু ও কমলার মত সাইট্রাস
জাতীয় ফল বেছে নিতে পারেন। এবং যেসব বাচ্চারা চিবিয়ে খেতে পারে না তাদের জন্য
ডিমের কুসুম, খিচুড়ি, সবজির স্যুপ, ফলের রস খাওয়ানো যায়। মোটকথা শীতের সময়
শিশুকে তার বয়স ও চাহিদা অনুযায়ী পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার, ফলমূল ও শাকসবজি
খাওয়াতে হবে।
ডাইপার পরানোঃ শীতের সময় শিশুর ডাইপার
লিক করে বা ভিজে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। তাই শিশুকে শুষ্ক ও পরিচ্ছন্ন রাখতে
প্রতি ছয় ঘন্টা পর পর ডায়াপার পাল্টে দিতে হবে। এবং সে ক্ষেত্রে বেছে নিতে হবে
বেশি শোষণ ক্ষমতাযুক্ত ডায়াপার।
শরীর মালিশঃ শিশুদের শরীর
মালিশ করা অনেক পুরনো নিয়ম। আগের সময়ের যারা আমাদের বড় আছেন তারা অনেকেই
বাচ্চাদের রোদে শুয়ে তেল দিয়ে বাচ্চাদের মালিশ করে। শিশুর দেহে রক্ত চলাচল
বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মালিশ অত্যন্ত উপকারী। এতে শরীর প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি পায়।
তাই অবশ্যই শিশুদের শরীরের মালিশ করতে হবে।
শীতকালে নবজাতকের যত্ন
শীতকালে একটু বড় বাচ্চাদের থেকে নবজাতক বাচ্চাদের বেশি যত্ন নিতে হয়। কেননা নবজাতকের তাপ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা হয় খুবই কম। তাই অল্প শীতেও তারা কাবু হয়ে যায়। যে সকল বাচ্চা পূর্ণ ৩৭ সপ্তাহ মাতৃগর্ভে কাটিয়ে জন্ম নিয়েছে তার ক্ষেত্রে জটিলতা কম। কিন্তু সময়ের আগেই জন্ম নেওয়া শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে।
শীতের সময় বাইরে ঠান্ডা বাতাস থেকে বাঁচতে ঘরের দরজা জানালা বন্ধ রেখে উষ্ণতা নিশ্চিত করতে পারেন। তবে ঘরে কয়লা ও তোষের আগুন রাখা উচিত নয়। এতে নবজাতক বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে। নবজাতককে আলাদা বিছানায় না রেখে মায়ের বুকের উপর রাখুন যেন নবজাতকের ত্বকের সঙ্গে মায়ের ত্বক লেগে থাকে।
তারপর নবজাতককে উষ্ণ কাপড় দিয়ে ঢেকে দুধ খেতে দিন। দুধ খাওয়ার সময় হালকা ব্যয়াম হয় বলে শরীর নিজ থেকে উত্তাপ তৈরি করে। নবজাতকের জন্মের পর ত্বকে এক ধরনের সাদা আবরণ দেখা যায়। অনেকেই এটিকে গোসল করিয়ে ধুয়ে দেন আসলে কিন্তু এই আবরণ নবজাতকের দেহের তাপমাত্রা ধরে রাখে জীবাণু সংক্রমণ প্রতিরোধ করে সুরক্ষা দেয়।
শীতে অনেক বাচ্চার নাভিতে তেল মেখে রোদে শুয়ে রাখেন এতে নাভিতে সংক্রমণ হতে পারে জন্মের পর শুধু একবারের জন্য জীবাণু নাশক তরল দিয়ে মোছা ছাড়া পরবর্তী সময়ে নাভিতে কিন্তু কিছুই লাগানোর প্রয়োজন নেই। শীতের সময় নবজাতককে ডায়াপার পড়ালে তাও থাকবে নাভির নিচে ডায়াপার ৬ ঘণ্টার বেশি কোনোভাবেই রাখা যাবে না।
ডায়াপার থেকে রাস হতে পারে। তাই আগে থেকে ভেসলিন বা জিংক সমৃদ্ধ ক্রিম লাগিয়ে
দিন। শীতে নবজাতককে অবশ্যই গরম কাপড় পরাতে হবে এবং গরম কাপড় পরানোর আগে সুতির
জামা পড়াতে হবে ভেতরে। এবং সন্ধ্যার পর বাইরে না বের হলে ভালো শীতকালীন সময়ে
নবজাতককে নিয়ে।
শীতকালে শিশুদের ত্বকের যত্ন
শীতকালের ঠান্ডা আবহাওয়া ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। এবং বড়দের তুলনায় শিশুদের ত্বক বেশি নাজুক ও সংবেদনশীল হওয়ায় শিশুদের ত্বক খুব দ্রুত আর্দ্রতা হারিয়ে ফেলে। আবার বড়দের তুলনায় শিশুদের ত্বকের প্রাকৃতিক ময়শ্চারাইজার কম থেকে থাকে। এই জন্যই শিশুর ত্বক ভালো রাখতে শীতের সময় শিশুদের ত্বকের বিশেষভাবে যত্ন নিতে হবে।
অনেকেই আছেন শিতে শিশুদের নিয়মিত গোসল করাতে চান না এটা একদমই ঠিক না। গোসল করালে ত্বক আদ্র ও নরম হয় শরীরের জীবাণু ও ধুলাবালি দূর হয়। গোসলের সময় হালকা নন গ্ৰেসি শ্যাম্পু দিয়ে শিশুর মাথার ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। দিনে একবার কিংবা একদিন অন্তর একবার শিশুকে গোসল করাতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ
কোন ভিটামিনের অভাবে ত্বক শুষ্ক হয়
হালকা কুসুম গরম পানিতে শিশুদের পশুর করাবেন তবে বেশিক্ষণ গরম পানিতে গোসল একদমই করাবেন না। গোসল শেষে শিশুর ত্বকে মশ্চারাইজার মালিশ করে দিন। ত্বক ভেজা থাকতে মশ্চারাইজিং লোশন লাগালে বেশি উপকার মেলে। শিশুর ত্বকে বেবি লোশন ও লাগাতে পারেন। এর ফলে শিশুর ত্বক সারাদিনের জন্য কোমল, আর্দ্র ও নরম থাকবে।
শীতকালে শিশুদের গাল ও ঠোঁট ফেটে যাওয়ার সমস্যা খুবই সচরাচর দেখা যায়। এক্ষেত্রে আপনি যেটি করতে পারেন সেটি হল গালে ক্রিম লাগিয়ে তা আলতো ভাবে মালিশ করে দিন। শিশুর ঠোঁটফাটা প্রতিরোধে ঠোঁটে ভ্যাসলিন বা লিপ বাম ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও শিশুর হাত পা ফাটা দূর করতে হাত ও পায়ে লোশন অথবা অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।
তবে শিশুদের ত্বক যেহেতু খুবই সেনসিটিভ হয়। তাই শিশুদের ত্বকের ক্ষেত্রে ভালো ব্র্যান্ডের প্রসাধনী পণ্য ব্যবহার করুন। নকল প্রসাধনী শিশুর সংবেদনশীল ত্বকের ক্ষেত্রে মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। এই বিষয়ে বিশেষভাবে সাবধানতা মেনে চলুন। শীতকালে শিশুদের ত্বকে অনেকেই তেল ব্যবহার করে থাকেন। এতে করে ত্বকে ময়লা জমে ত্বকের লোমকূপ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এছাড়াও মাথায় তেল ব্যবহার করার ফলেও মাথার ত্বক ভেজা থাকায় ঠান্ডা লাগতে পারে।
এতএব সুস্থ ত্বকের জন্য নিয়মিত শিশুকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো জরুরী। শিশুদের
খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যায় শীতকালে। এজন্য ঘন ঘন পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো
জরুরী এই সময় টাই। এতে ত্বক ভালো থাকবে। ত্বকের মসৃণতা উজ্জ্বলতা বাড়বে।
শীতকালে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর খাবার
শীতের সময় বড়দের মত ছোটদের রাও কাবু হয়ে যায়। এই সময় বাচ্চাদের প্রতি বিশেষ
যত্ন নিতে হয়। তাই শিশুকে সুস্থ রাখতে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখুন
গুরুত্বপূর্ণ কিছু খাবার। শীতকাল মানেই নানা ধরনের অসুস্থতার সময়। শীতে
বাচ্চাদের এমন সব খাবার দিন যাতে তারা সুস্থ থাকতে পারে কেননা এই সময় বাচ্চারা
এমনিতেই কোন খাবার খেতে চাই না। জেনে নিন শীতকালে কোন কোন জরুরি খাবার বাচ্চাদের
দিতে হবে।
দুধঃ দুধকে সুষম খাবার বলা হয়ে থাকে কেননা এতে
প্রয়োজনীয় প্রায় সব ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকে তাই নিয়মিত দুধ খাওয়া খুবই
উপকারী শিশুদের জন্য প্রথম খাবারই হল মায়ের বুকের দুধ এবং প্রথম এক বছর শিশুদের
শুধু মায়ের দুধে খাওয়ানো উচিত অন্য কোন দুধ নয়।
এক বছর পর থেকে শিশুদের অন্যান্য তরল দুধ খাওয়ানো শুরু করতে হবে। দুধের মধ্যে
থাকা পুষ্টিকর উপাদান সব বয়সের মানুষের জন্য উপকারী। তাই প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে
যাওয়ার আগে অথবা সকালে অবশ্যই এক গ্লাস দুধ দিন আপনার শিশুকে।
ডিমঃ
পুষ্টিবিদদের মতে ৬ থেকে ১১ মাস বয়সী শিশুকে ডিম ভালো করে সিদ্ধ করে শুধুমাত্র
কুসুম টুকু খাওয়াতে হবে। এই কুসুম ভাত, সবজি কিংবা পানির সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়াতে
পারেন। অর্থাৎ আপনার শিশু যেভাবে খেতে পারবে ঠিক সেভাবেই খাওয়াতে পারবেন।
এই বয়সে কোনোভাবে শিশুকে ডিমের সাদা অংশ খাওয়ানো যাবে না। তবে শিশুর এক বছর
পূর্ণ হলে সম্পূর্ণ ডিমই শিশুকে খাওয়াতে পারবেন। ডিমে থাকা ভিটামিন ডি, জিঙ্ক,
সেলেনিয়াম, ভিটামিন ই প্রভৃতি শিশু শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিশেষ
সহায়ক। তাছাড়া ডিমে থাকা প্রোটিন শীতকালে শিশুর এনার্জি বৃদ্ধির করতে সহায়তা
করে।
সবুজ শাকসবজিঃ শাকসবজি বড়দের পাশাপাশি শিশুদের খাওয়ানোর
ও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সবজি খাওয়াটা আসলে সব বয়সেই দরকার কিন্তু বয়স
অনুযায়ী শাকসবজি পরিমাণ হবে ভিন্ন। শিশুদের জন্য প্রথম ছয় মাস দরকার বুকের দুধ
বা কখনো সম্ভব না হলে অন্য দুধ। এ সময় কোন রকম শাক সবজি দেওয়া হয় না।
তবে ছয় মাস বয়স থেকে শিশুর বাড়তি খাবারের দরকার হয় তাই সেই বয়সের পর থেকে অল্প অল্প করে সহজে হজম হয় এমন শাকসবজি খিচুড়ির সাথে বা ভাতের সাথে রান্না করে খাওয়ানো যায়। তবে সে ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে শিশুরা ছয় মাস বয়স পর্যন্ত দুধ খেয়ে বেড়ে উঠে অন্য কোন খাবারে ওরা অভ্যস্ত নয়।
তাই হঠাৎ করে সেসব খাবার দিলে খাবে না বা খেলে প্রথম প্রথম অসুবিধা হবে। এক বছর বা দুই বছরের বেশি বাচ্চাদের অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি পরিমাণ মতো উপযুক্ত শাকসবজি শিশুকে খাওয়াতে হবে। এই সময় শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস করে দিতে না পারলে ভবিষ্যতে ঐসব শিশুকে নিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হবে।
না হলে ভবিষ্যৎ জীবনে আর শক্ত শরীর নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবে না। তাই শিশুদের জন্য
শাকসবজি খুবই প্রয়োজনীয় এবং এক বছর বা দুই বছরের পর থেকে সকল বাচ্চাদের খাবারের
সাথে অবশ্যই যেকোনো সবজি যুক্ত করতে হবে।
শীতকালে বাচ্চাদের পোশাক
শীতকালীন সময়ে বড়রা ঠান্ডা সহ্য করতে পারলে শিশুদের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই সময় বাচ্চাদের প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে হয় বিশেষ করে শিশুর পোশাক-আশাক নিয়ে। কেননা এই সময়টাই বাচ্চাদের জ্বর, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া সহ বিভিন্ন ধরনের অসুখ দেখা যায়। পাঁচ বছরের নিচের বয়সী শিশুর মৃত্যু ২৪ শতাংশের ক্ষেত্রে দায়ী নিউমোনিয়া ও শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগ।
তাই শীতের হাওয়ায় কাঁপন লাগার সঙ্গে সঙ্গে অভিভাবকদের মধ্যে চিন্তা শুরু হয়ে যায় কি করে এর পক্ষ থেকে রক্ষা করা যায়। শীতকালীন সময়ে নবজাতককে শীত পোশাক কম্বল সহ গরম রাখতে হবে। প্রয়োজনে মাথায় টুপি এবং হাতও পায়ে মজা পড়িয়ে রাখতে হবে।
এ ধরনের বাচ্চাদের জন্য হাইপোথারমিয়া প্রাণ সংশয়ের কারণ হতে পারে। আবার স্কুল পড়ুয়া শিশুদের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। স্কুলে পড়া বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অনেকেরই স্কুল ড্রেসের সঙ্গে মিলিয়ে শীত পোশাকও নির্ধারিত থাকে। শীতের পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে দেখতে হবে পোশাকটি যেন বেশি ভারী অথবা খসখসে না হয়।
কখনো কখনো অতিরিক্ত কাপড় অথবা কাপড়ের ধরনের কারণে শিশুদের ত্বকের রেশ দেখা দিতে পারে। সেই ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। শীতকালীন সময় বাচ্চাদের পোশাকের পরিচ্ছন্নতার দিকটাও সমানভাবে খেয়াল রাখতে হবে।
শীতের সময় এমনিতেই বাতাসে ধুলাবালির পরিমাণ বেশি থাকে। তাই শীতের জামাকাপড়
প্রতি সপ্তাহের প্রয়োজন হলে আরো অল্প সময়ের ব্যবধানে ভালোভাবে পরিষ্কার করে
ধুয়ে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। একই পোশাক যেন পরিষ্কার না করে বেশিদিন ব্যবহার করা
না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
শীতকালীন সময়ে শিশুর যত্ন সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন। শীতে শিশুর মুখে কি লাগানো উচিত?
উত্তর। একটি ঘন লোশন, ময়শ্চারাইজার, পেট্রোলিয়াম জেলি বা ভ্যাসলিন লাগাতে পারেন।
প্রশ্ন।
শিশুর ত্বকের জন্য কোন ভ্যাসলিন ভালো?
উত্তর। শিশুর সংবেদনশীল
নরম ত্বকের জন্য মৃদু কন্ডিশনার যত্ন প্রদান করে
Vaseline Blue Seal Baby Soft Petroleum Jelly.
প্রশ্ন। কোল্ডক্রিম নাকি ময়শ্চারাইজার কোনটা ভালো?
উত্তর। কোল্ড ক্রিম গুলি সাধারনত ভারী এবং শুষ্ক ত্বকের জন্য আরও উপযুক্ত আর
ময়শ্চারাইজার হালকা এবং তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ভালো।
প্রশ্ন।
শিশুর ত্বক শুষ্ক হলে কিভাবে বুঝবো?
উত্তর। শিশুর নরম শরীরে
রুক্ষ দাগ, আশঁযুক্ত ছোপ ও খোসা ছাড়ানোর চামড়া লক্ষ হলেই শিশুর ত্বক শুষ্ক
হিসেবে ধরা হয়।
প্রশ্ন। বাচ্চার জন্মের সময় ওজন কত হওয়া
উচিত?
উত্তর। ৩.৮ কেজির মধ্যে।
প্রশ্ন। কি খেলে
শিশুদের ওজন বাড়ে?
উত্তর। শিশুর ওজন বাড়াতে যে খাবারগুলো
খুব দরকার সেগুলো হলো দুধ ও দুধ জাতীয় খাবার যেমন ঘি,পনির, পায়েস,পুডিং
ইত্যাদি। প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন- ডিম, বাদাম, সিমের বিচি, শর্করা জাতীয়
খাদ্য যেমন- আলু, ভাত, রুটি ইত্যাদি খেলে ওজন বাড়ে।
লেখকের শেষ কথা
শীতকালে শিশুর যত্ন নেওয়াটা অত্যন্ত জরুরি। কেননা এই সময় আমাদের ত্বক খুবই শুষ্ক এবং রুক্ষ হয়ে পড়ে। তাই শীতকালে বড়দের তুলনায় শিশুদের দিকে বিশেষ নজর দিতে হয়। শীতের সময় বাচ্চাদের দিকে খেয়াল রাখা এবং বাচ্চাদের যত্ন নেওয়া খুবই প্রয়োজনীয়।
কেননা এই সময় ত্বক অনেক বেশি শুষ্ক হয়ে যায় বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও একই। অন্যান্য সময়ের তুলনায় শীতকাল শিশুদের জন্য একটু কষ্টকর ও অসহনীয় হয়ে ওঠে। শীতকালে শিশুর যত্ন, শিশুর খাবার দাবার সম্পর্কে, শিশুর পোশাক-আশাক সহ নবজাতকের যত্ন সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে উল্লেখিত করা হয়েছে।
আজকে আর্টিকেলটির মধ্যে। আশা করছি আপনি আমাদের পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে উপকৃত
হয়েছেন। লাইফ স্টাইল সম্পর্কিত এমন আরো পোস্ট করতে আমাদের ওয়েবসাইটের হোমপেজে
ভিজিট করুন ধন্যবাদ।
অমৃতা ব্লগারের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url