রবিউল আউয়ালের আমল ও রোজা
রবিউল আউয়াল মাস মুসলিমদের জন্য বিশেষ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত। এ মাসের ফজিলত এবং আমল রয়েছে অনেক। রবিউল আউয়ালের আমল ও রোজা রাখার অনেকগুলো ফজিলত রয়েছে। এই মাসে ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই মাসের জন্মগ্রহণ করেছেন এবং এই মাসেই তিনি ইন্তেকাল ও করেছেন।
এ কারণে মুসলমানদের কাছে এ মাসের গুরুত্ব অনেক বেশি। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাই সালাম জন্মগ্রহণের কারণে যেমন এই মাসের ফজিলত বেড়েছে তেমনি সোমবার দিনেরও
ফজিলত বেড়েছে এই মাসে কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে
জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি এই দিনের রোজা সম্পর্কে বলেন এই দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি
আর এই দিনে আমাকে রাসুল হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে এই দিনে আমার উপর (প্রথম ওহী)
নাযিল করা হয়েছে। অতএব এই দিনে অনেক বেশি ফজিলত রয়েছে।
সূচিপত্রঃ রবিউল আউয়ালের আমল ও রোজা
- রবিউল আউয়াল মাসের আমল
- রবিউল আউয়াল মাসের রোজা
- রবিউল আউয়াল মাসের ফজিলত
- ২০২৪ সালের মিলাদুন্নবী কত তারিখ
- রবিউল আউয়ালকে ঈদ-এ মিলাদুন্নবী কেন বলা হয়
- লেখক এর শেষ কথা রবিউল আউয়ালের আমল ও রোজা সম্পর্কে
রবিউল আউয়াল মাসের আমল
রবিউল আউয়াল মাসের জন্য কোরআন বা হাদিসে এই মাসের আলাদা কোন আমলের বর্ণনা পাওয়া যায়নি। সে কারণে নিজেদের মন মত কোন ধরনের আমলের বর্ণনা দেওয়া শরীয়তে হারাম কাজ হিসেবে ঘোষিত হয়। তবে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিরাত আলোচনা করা একটি বড় ইবাদত এমনকি এটি ঈমানের অংশ এর মধ্যেও পড়ে।
নবীজির সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্মের ঘটনার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হলো তার জীবনাদর্শের অনুসরণ। কেননা হাদিসের মধ্যে আমাদেরকে নবীজির দেখানো পথ অনুসরণ করে এবং তার জীবাণাদর্শণ অনুসরণ করে চলতে বলা হয়েছে।
নবীজি (সাঃ) এর জন্ম, শৈশব, নবী হিসেবে প্রেরণ, জিহাদ, ইবাদত, দাওয়াত, নীতি-নৈতিকতা, আখলাক, চরিত্র, তাকওয়া-তাহারত, ক্রোধ, হাসি, দয়া ভালোবাসা, উঠা-বসা, হাটা, ঘুম, জাগরণসহ যাবতীয় চালচল ইত্যাদি মুসলিম উম্মাহর সামনে উপস্থাপিত করা খুবই উত্তম কাজ এই মাসের জন্য। এগুলো সামনে রেখে আলোচনা সভার আয়োজন করা অবশ্যই ভালো এবং প্রশংসনীয় কাজ।
রবিউল আউয়াল মাসে অন্য কোন কাজে মেতে না উঠে এগুলো করা যেতে পারে। নবীজি
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনাদর্শন সব যুগের সব মানুষের জন্য এবং
বিশ্ব মানবতার মুক্তির জন্য। আমাদের অবশ্যই নবীর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে হবে
এবং বাস্তব জীবনে নবীজির জীবনাদর্শ আমাদের জীবনে প্রতিফলন ঘটাতে হবে। না
ঘটলে নবী প্রেমের দাবি অর্থহীন।
রবিউল আউয়াল মাসের রোজা
রবিউল আউয়াল মাসের রোজা বলতে কোন বিশেষ রোজা না থাকলেও প্রত্যেক আরবি মাসের ১৩ ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখা সুন্নত এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ আমল। রবিউল আউয়াল মাসেও ১৩ ১৪ ১৫ তারিখে রোজা রাখা যায় এতে কোন সমস্যা নেই বরং এটি অনেক ভালো এবং সওয়াব এর কাজ হবে। আরবি মাসের সময় বৃহস্পতিবার রোজা রাখার গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত রয়েছে।
তাই আপনিও চাইলে রবিউল আউয়াল মাসের প্রত্যেক সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতে পারেন এতে কোন সমস্যা হবে না। আরবি মাসের প্রত্যেক সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সোমবার ও বৃহস্পতিবার (আল্লাহর) নিকট বান্দার আমল পেশ করা হয়।
আরও পড়ুনঃ
১২ রবিউল আউয়াল ২০২৪ কত তারিখ
তাই আমি পছন্দ করি যে রোজা থাকা অবস্থায় যেন আমার আমলনামা আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। (তিরমিজি ৭৪৭)। আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার জান্নাতে দরজা খুলে দেওয়া হয়। এরপর এমন সব বান্দাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়।
যারা আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপন করে না তবে সে ব্যক্তিকে নয় যার ভাই ও তার
মধ্যে শত্রুতা বিদ্যমান। এরপর বলা হবে এই দুজনকে আপোষ মীমাংসা করার জন্য অবকাশ
দাও, এই দুজনকে আপোষ মীমাংসা করার জন্য সুযোগ দাও, এই দুজনকে আপোষ মীমাংসা করার
জন্য সুযোগ দাও। (মুসলিম ৬৪৩৮)।
রবিউল আউয়াল মাসের ফজিলত
রবিউল আউয়াল মাসে অনেকগুলো ফজিলত রয়েছে। এবং হিজরী বর্ষের তৃতীয় মাস হলো রবিউল
আউয়াল। আরবি মাসগুলোর মধ্যে এই মাসের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এ মাসে সাইয়্যেদুল
মুরসালিন খাতামুন নাবিন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবীতে
আগমন করেন। আবার এই মাসেই রিসালাতের দায়িত্ব পালন শেষে তিনি ইন্তেকাল করেন। এই
মাসের বেশ কিছু ফজিলত রয়েছে তার মধ্যে কিছু এখানে উল্লেখ করা হলো।
প্রথম কারণঃ
এই মাসে পৃথিবীতে আগমন করেন বিশ্ব মানবতার মুক্তির দুত নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আবার এই মাসে তিনি পৃথিবী থেকে বিদায় নেন।
দ্বিতীয় কারণঃ
এই মাসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আম্মাজান খাদিজাতুল কুবরা
রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহাকে বিয়ে করেন।
তৃতীয় কারণঃ এই মাসে
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রিয় মাতৃভূমি মক্কা ছেড়ে
মদিনায় হিজরত করেন এবং যেদিন তিনি মদিনায় পৌঁছান তা ছিল সোমবার ১২ই রবিউল
আওয়াল।
চতুর্থ কারণলঃ এই মাসেই মুসলমানদের জন্য সর্ব প্রথম
মসজিদ তৈরি করা হয় এবং এটি ইসলামের ইতিহাসে নির্মিত হয় প্রথম মসজিদ হিসেবে।
পঞ্চম কারণঃ
এই মাসেই বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের উপর আরোপিত রিসালাতের দায়িত্ব পালন শেষে দ্বীন ইসলাম পূর্ণতার
মাধ্যমে নিজের প্রভুর আহব্বনে সারা দিন অর্থাৎ তিনি ইন্তেকাল করেন।
২০২৪ সালে মিলাদুন্নবী কত তারিখে
২০২৪ সালের মিলাদুন্নবী পালন হবে ১৬ সেপ্টেম্বর। ঈদে মিলাদুন্নবী পুরো মুসলিম জাতির জন্য অত্যন্ত আনন্দময় একটি দিন। ঈদে মিলাদুন্নবী মুসলিম জাতিরা প্রাণ খুলে আনন্দ করে এবং মিলাদ মাহফিল করে। অনেকে মুসলিম ভাই বোন আছে যারা মিলাদুন্নবী প্রস্তুতির জন্য মিলাদুন্নবী কবে কত তারিখে সেটা জানতে চাই সে সকল মুসলিম ভাই ও বোনদের ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে জানানোর উদ্দেশ্যে আমাদের আজকের পোস্টটি।
আমরা সকলেই জানি হিজরী সেনের ১২ তারিখ রবিউল আউয়াল মাসে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপিত
করা হয়। ২০২৪ সালেও ঈদে মিলাদুন্নবী
১৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা থেকে ১৬ই সেপ্টেম্বর
২০২৪ অর্থাৎ রোজ রবিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা হবে। আশা
করছি আপনি ওপরের তথ্য পড়ে বুঝতে পেরেছেন ঈদে মিলাদুন্নবী ২০২৪ কত তারিখ এবং কখন
থেকে হবে।
রবিউল আওয়াল কে ঈদে মিলাদুন্নবী কেন বলা হয়
হিজরি বর্ষের তৃতীয় মাস রবিউল আউয়াল ১২ তারিখে উৎসব অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশি
মুসলমানরা এই দিনকে ঈদে মিলাদুন্নবী বলে অভিহিত করেন অপরদিকে পশ্চিমবঙ্গের
মুসলমানদের কাছে এই দিন নবী দিবস হিসেবে পরিচিত। ১২ই রবিউল আউয়াল পবিত্র ঈদে
মিলাদুন্নবী। কেননা এই দিনে আমাদের প্রিয় নবী শেষ নবী নবী কুলের শিরোমনি হযরত
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্ম এবং মৃত্যু বরণ করেন।
১২ই রবিউল আউয়ালকে মুসলিম বিশ্ব মহানবীর জন্ম ওফাতের দিবস হিসেবে পালন করে থাকেন। এই দিবসটি ২১ সঙ্গে আনন্দ এবং দুঃখের তাই এই দিনটি বিশেষ তাৎপর্যের সাথে পালিত হয় সিরাতুন্নবী হিসেবে বা ঈদে মিলাদুন্নবী হিসেবে। এই দিনে মুসলমান জাতিরা মিলাদ মাহফিল এবং দোয়ার মাধ্যমে উদযাপিত করে থাকে। এই দিনে একদল মানুষ আছে যারা মিষ্টি ও হালুয়া খেয়ে ১২ই রবিউল আউয়াল ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করে।
অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোজা রাখার মাধ্যমে ১২ই রবিউল
আওয়াল বা ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করেছেন। এই দিন আমাদের শুধু অন্যান্য কাজ করলেই
হবে না আমাদেরকে রোজা রেখে আমল করতে হবে এবং দোয়া পাঠ করতে হবে। সুতরাং ১২ই
রবিউল আউয়াল বা ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের সুন্ন তালিকা হলো এই দিনে রোজা রাখা।
লেখক এর শেষ কথাঃ রবিউল আউয়ালের আমল ও রোজা সম্পর্কে
১২ই রবিউল আওয়ালে আমল করা এবং রোজা রাখা সুন্নত। মুসলমানদের কাছে এ মাসের গুরুত্ব অনেক বেশি। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম জন্মগ্রহণের কারণে যেমন এই মাসের ফজিলত বেড়েছে তেমনি সোমবার দিনেরও ফজিলত বেড়েছে এই মাসে কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি এই দিনের রোজা সম্পর্কে বলেন এই দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি।
আর এই দিনে আমাকে রাসুল হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে এই দিনে আমার উপর
(প্রথম ওহী) নাযিল করা হয়েছে। এবং সেই সম্পর্কিত সকল তথ্য আমাদের ওপরের
পোস্টটির মাধ্যমে আমরা আলোচনা করেছি আশা করছি আপনি আমাদের পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে
উপকৃত হয়েছেন এবং জানতে পেরেছেন ১২ই রবিউল আউয়াল বা ঈদে মিলাদুন্নবীর আমল ও
রোজা সমূহ সম্পর্কে। ইসলামিক সম্পর্কিত এমন আরো পোস্ট পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটের
হোমপেজে ভিজিট করুন।
আরও পড়ুনঃ
১২ রবিউল আউয়াল ২০২৪ কত তারিখ
অমৃতা ব্লগারের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url