১২ রবিউল আউয়াল ২০২৪ কত তারিখ

রবিউল আউয়াল অর্থ হলো শুরু বা মাস এই মাসটির নাম রবিউল আউয়াল কারণ ইসলাম ধর্মীয় মতানুসারে এটি একটি শুভ মাস। রবিউল আউয়াল হল ইসলামী বর্ষপঞ্জির তৃতীয় মাস। এই মাসে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান ইসলামের শেষ নবী মোহাম্মদ (স:) জন্মদিন পালন করা হয়। 

তবুও সুন্নিদের মতানুসারে নবী মোহাম্মদ এর সঠিক জন্মদিবস টি হল এই মাসের ১২ তারিখ। অর্থাৎ ১২ই রবিউল। শিয়াদের মত অনুসারে এটি হলো ১৭ তারিখ।

সূচিপত্রঃ ১২ রবিউল আউয়াল ২০২৪

রবিউল আউয়াল শব্দের অর্থ কি

নাম অর্থ এবং উচ্চারণ
রবিউল নামের অর্থ বসন্ত
আওয়াল নামের অর্থ প্রথম
রবিউল-আওয়াল অর্থ ইংরেজিতে the first spring
রবিউল-আওয়াল বানান ইংরেজিতে Rabiul-Awal
রবিউল-আওয়াল বানান আরবিতে ربيع الأول

রবিউল আউয়াল কেন বলা হয়

রবিউল আউয়াল মানে হল প্রথম বসন্ত বা বসন্তকালের প্রথম মাস। হিজরী সনের তৃতীয় মাস হল রবিউল আউয়াল। প্রিয় নবীজি (সা:) এর বহুমাত্রিক স্মৃতিধ ধন্য এই মাস মানব সভ্যতার ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছে। মুসলিম মানুষদের কাছে এই মাস শ্রদ্ধা ভালবাসা ও মহিমায় পরিপূর্ণ। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১২ই রবিউল আউয়াল দুনিয়াতে শুভাগমন করেন। 

রিসালাতের মহা মিশনের সফলতা ও পরিপূর্ণতার অতীত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ইসলামী ধর্ম রাষ্ট্র তথা সামনে সমাজ প্রতিষ্ঠার সূচনা যে হিজরত তাও সংঘটিত হয়েছিল এই রবিউল আউয়াল মাসে। এই মাসের ১২ তারিখেই আমাদের আখেরি নবী তিরোধান বা ওফাত হয়েছিল। রবিউল আউয়াল মাসটি মুসলিম সমাজে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মেরও স্মারক হিসেবে পালিত হয়। 

যা ফাতিহায়ে দোয়াজ-দাহম নামে পরিচিত। ফাতিহায়ে দোয়াজ-দাহম কথাটি ফারসি ভাষা থেকে আগত হয়েছে। মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর পরিচয় প্রকাশ করা। আর নবী-রাসূল প্রেরণের লক্ষ্য হলো মানুষকে আল্লাহর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। তাই আল্লাহকে পেতে রাসুলুল্লাহ (সা:) এর আদর্শ অনুসরণ করতে হবে আমাদের। 

আরও পড়ুনঃ ১২ই রবিউল আউয়াল এর আমল এবং রোজা

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা যা করেছেন, বা করতে বলেছেন আমাদের উদ্দেশ্যে আমাদের তা করতে হবে। আর যে সকল কাজ আমাদের করতে নিষেধ করেছেন সেই সকল কর্ম থেকে আমাদের দূরে থাকতে হবে এবং বর্জন করতে হবে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরানের ঘোষণা রয়েছে, যা দিয়েছে তোমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা তোমরা ধারণ করো; আর যা থেকে তিনি বারণ করেছেন তা হতে বিরত থাকো। (সুরা-৫৯ হাশর, আয়াত: ৭)। 

রবিউল আউয়াল মাসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো পরিপূর্ণ জীবন বিধান। আল্লাহর কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য ধর্ম ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ রূপে সর্বস্তরে বাস্তবায়নের মাধ্যমে সব আল্লাহদ্রোহী শক্তিকে সম্পূর্ণ ভাবে নাস্তানাবুদ করে দিয়ে শান্তির ধর্ম ইসলামের সাম্য ও নেয় প্রতিষ্ঠিত করা। 

এবং এটাই নবী ও রাসূল প্রেরণের মূল উদ্দেশ্য যা পবিত্র কুরআনে বরাবর বিবৃত হয়েছে। তিনি সে মহান প্রভু যিনি রাসূল প্রেরণ করেছেন সঠিক পন্থা ও সত্য ধর্ম সহযোগে, যাতে সে ধর্মকে প্রকাশ করতে পারেন সর্ব ধর্মের শিখরে।

রবিউল আউয়াল মাস কবে

 

ইংরেজি তারিখ বার হিজরি তারিখ
৫-সেপ্টেম্বর-২০২৪ বৃহস্পতি ১-রবিউল আউয়াল-১৪৪৬
৬-সেপ্টেম্বর-২০২৪ শুক্র ২-রবিউল আউয়াল-১৪৪৬
৭-সেপ্টেম্বর-২০২৪ শনি ৩-রবিউল আউয়াল-১৪৪৬
৮-সেপ্টেম্বর-২০২৪ রবি ৪-রবিউল আউয়াল-১৪৪৬
৯-সেপ্টেম্বর-২০২৪ সোম ৫-রবিউল আউয়াল-১৪৪৬
১০-সেপ্টেম্বর-২০২৪ মঙ্গল ৬-রবিউল আউয়াল-১৪৪৬
১১-সেপ্টেম্বর-২০২৪ বুধ ৭-রবিউল আউয়াল-১৪৪৬
১২-সেপ্টেম্বর-২০২৪ বৃহস্পতি ৮-রবিউল আউয়াল-১৪৪৬
১৩-সেপ্টেম্বর-২০২৪ শুক্র ৯-রবিউল আউয়াল-১৪৪৬
১৪-সেপ্টেম্বর-২০২৪ শনি ১০-রবিউল আউয়াল-১৪৪৬
১৫-সেপ্টেম্বর-২০২৪ রবি ১১-রবিউল আউয়াল-১৪৪৬
১৬-সেপ্টেম্বর-২০২৪ সোম ১২-রবিউল আউয়াল-১৪৪৬
১৭-সেপ্টেম্বর-২০২৪ মঙ্গল ১৩-রবিউল আউয়াল-১৪৪৬
১৮-সেপ্টেম্বর-২০২৪ বুধ ১৪-রবিউল আউয়াল-১৪৪৬
১৯-সেপ্টেম্বর-২০২৪ বৃহস্পতি ১৫-রবিউল আউয়াল-১৪৪৬
২০-সেপ্টেম্বর-২০২৪ শুক্র ১৬-রবিউল আউয়াল-১৪৪৬
২১-সেপ্টেম্বর-২০২৪ শনি ১৭-রবিউল আউয়াল-১৪৪৬
২২-সেপ্টেম্বর-২০২৪ রবি ১৮-রবিউল আউয়াল-১৪৪৬
২৩-সেপ্টেম্বর-২০২৪ সোম ১৯-রবিউল আউয়াল-১৪৪৬
২৪-সেপ্টেম্বর-২০২৪ মঙ্গল ২০-রবিউল আউয়াল-১৪৪৬
২৫-সেপ্টেম্বর-২০২৪ বুধ ২১-রবিউল আউয়াল-১৪৪৬
২৬-সেপ্টেম্বর-২০২৪ বৃহস্পতি ২২-রবিউল আউয়াল-১৪৪৬
২৭-সেপ্টেম্বর-২০২৪ শুক্র ২৩-রবিউল আউয়াল-১৪৪৬
২৮-সেপ্টেম্বর-২০২৪ শনি ২৪-রবিউল আউয়াল-১৪৪৬
২৯-সেপ্টেম্বর-২০২৪ রবি ২৫-রবিউল আউয়াল-১৪৪৬
৩০-সেপ্টেম্বর-২০২৪ সোম ২৬-রবিউল আউয়াল-১৪৪৬
১-অক্টোবর-২০২৪ মঙ্গল ২৭-রবিউল আউয়াল-১৪৪৬
২-অক্টোবর-২০২৪ বুধ ২৮-রবিউল আউয়াল-১৪৪৬
৩-অক্টোবর-২০২৪ বৃহস্পতি ২৯-রবিউল আউয়াল-১৪৪৬
৪-অক্টোবর-২০২৪ শুক্র ৩০-রবিউল আউয়াল-১৪৪৬

 

আরবি বারো মাসের নাম কি কি

১৪৪০ হিজরী শেষ হয়ে শুরু হল ১৪৪১ হিজরী হিজরী সাল চালু হওয়ার আগে আরবরা তাদের বিভিন্ন স্মরণীয় ঘটনার উপর নির্ভর করে দিন গণনা করতেন। দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা:) হওয়ার যুগে একটি নির্দিষ্ট তারিখ। হিসাব করার দরকার হলে হযরত আলী (রা:) সহ কয়েকজন সাহাবীর পরামর্শে একটি নির্দিষ্ট সাল গণনার পরামর্শ করা হয়। 

কিন্তু ওমর (রা:) রাসূলুল্লাহ (সা:) এর হিজরতের ঘটনা থেকে সাল গণনার প্রস্তাব করেন এতে সাহাবীরা ঐক্যমত পোষণ করেন। হযরত ওমর (রা:) এর শাসনামলে তার কাছে একটি চুক্তিপত্র আনা হয় সেখানে সাবান মাসের কথা উল্লেখ ছিল তখন ওমর (রা:) বললেন এটা কি গত সাবান না আগামী সাবান মাস। 

এরপর তিনি তারিখ গণনার নির্দেশ দিলেন এবং রাসূলুল্লাহ (সা:) এর মদিনায় হিজরত কে কেন্দ্র করে হিজরী সাল গণনার সূচনা করেন। এর ধারাবাহিকতায় আজও হিজরির সাল প্রচলিত রয়েছে। হিজরী সাল গণনার আগে থেকে আরবি মাসের ব্যবহার ছিল আরবরা মাসগুলো ব্যবহার করতেন। অন্য সব সালের মতো হিজরী সালেও ১২ টি মাস রয়েছে। 

ক্রম ইংরেজি বাংলা উচ্চারণ
১. Moharram মহরম
২. Safar সফল
৩. Robiul Awal রবিউল আউয়াল
৪. Rabius Sani রবিউস সানি
৫. Jamadiul Awal জমাদিউল আউয়াল
৬. Jamadius Sani জমাদিউস সানি
৭. Rajab রজব
৮. Shaban শাবান
৯. Ramjan রমজান
১০. Shawal শওয়াল
১১. Jelkad জিলক্বদ
১২. Jilhaj জিলহজ্জ

আল্লাহ তায়ালার কাছে বারো মাসে এক বছর। যেমন তিনি ঘোষণা করেন নিশ্চয়ই আসমান সমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে আল্লাহর বিধানে আল্লাহর কাছে বারোটি।  এর মধ্যে চারটি সম্মানিত মাস কে চিহ্নিত করতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা:) বিদায় হজের সময় মিনা প্রান্তরে দাঁড়িয়ে বলেন তিনটি মাস হলো জিলহজ ও মহরম এবং অপরটি হলো রজব। (তাফসিরে ইবনে কাসির)।

আরবি বছরের প্রথম মাসের নাম কি

আরবি বছরের প্রথম মাসের নাম হল মহরম। এই মাসে অনেকগুলো ফজিলত রয়েছে। আল্লাহ তাআলা এই মাসে বিশেষ কিছু ঘটনা ঘটিয়েছেন। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে কেন্দ্র করে এ মাস কে ঘিরে কিছু বিভ্রান্তি ছড়িয়ে আছে সমাজে। এসব পরিহার করে এ মাসের জন্য হাদিসে বর্ণিত নফল আমল গুলো করা একজন মুমিনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই মাসের ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত নিচে উল্লেখ করা হলো।

আশুরার রোজা রাখাঃ আশুরার দিনে অনেক নবীর দোয়া কবুল করেছেন আল্লাহ তা'আলা। তাই এই দিনে দুআ কবুলের দিনও বলা হয়, ইসলামী শরীয়তের মানদন্ডে আশুরার অনেক তাৎপর্য ও ফজিলত রয়েছে। আশুরা রোজা রাখা মুস্তাহাব আমল। আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল(সা:) বলেন আশুরার একদিনের রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে এ আশা করি যে তিনি এ রোজার অছিলায় বান্দার আগের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন। (মুসলিম, হাদিস: ১১৬২) ।পবিত্র আশুরার দুটি রোজা রাখতে হবে।

৯ বা ১১ মহররমের রোজা রাখাঃ শরীয়ত অনুযায়ী আশুরার রোজা দুইটি। মহররমের ৯, ১০ কিংবা ১০, ১১ তারিখ। তবে কোন কোন আলেম এ বিষয়ে বর্ণিত সব হাদিসের উপর আমলের সুবিধার্থে ৯,১০ ও ১১ এ ৩ দিন রোজা রাখার কথা বলেন। রাসূল (সা:) বলেছেন তোমরা আশুরার দিন (মহররমের দশম দিবস) রোজা রাখো এবং তাতে ইহুদিদের বিরুদ্ধাচারণ কর আশুরার আগে একদিন বা পরে একদিন রোজা রাখো। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস: ২১৫৪)।

নফল রোজা রাখাঃ নফল রোজা রাখা এ মাসের অন্যতম আমল নবীজি এই মাসের নফল রোজাকে সর্বোত্তম ঘোষণা করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন রমজানের রোজার পর সর্বোত্তম রোজা হচ্ছে মহরমের রোজা। (মুসলিম, হাদিস: ২৬৪৫)।

তওবা করাঃ নফল রোজা রাখার পাশাপাশি মহররমের বিশেষ আমল হল তওবা করা। কেননা রাসূল (সা:) ইরশাদ করেন মহরম আল্লাহর মাস এই মাসে অনেক ফজিলত রয়েছে। এই মাস এমন একটি দিন যেদিন আল্লাহ তাআলা একটি সম্প্রদায়ের তওবা কবুল করেছেন আশা করা যায় সেদিন অন্যান্য সম্প্রদায়ের তওবা কবুল করা হবে। (তিরমিজি, হাদিস ৭৪১)।

লেখকের শেষ কথাঃ ১২ রবিউল আউয়াল ২০২৪ তারিখ

১২ই রবিউল আউয়াল বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম দিবস হিসেবেই পালন করা হয়। অথচ তিনি এ তারিখে ইন্তেকাল ও করেছেন কিন্তু এই দিনটি তার মৃত্যুর দিবস হিসেবে কখনো পালন করা হয় না। সব দেশে ও সব জাতির মধ্যেই মহান ব্যক্তিত্বের জন্ম ও মৃত্যু দিবস পালন করার রীতি চালু আছে। 

হিজরি বর্ষের তৃতীয় মাস রবিউল আউয়াল। আরবি মাসগুলোর মধ্যে এ মাসের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এ মাসেই সাইয়্যেদুল মুরসালিন, খাতামুন নাবিয়্যিন হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবীতে আগমন করেন, আবার এ মাসেই রিসালাতের দায়িত্ব পালন শেষে নিজ প্রভুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন তিনি।

ওপরের পোস্টের মাধ্যমে আমরা ১২ই রবিউল আউয়াল ২০২৪ এর সমস্ত তথ্য উল্লেখ করেছি। আশা করছি আপনি আমাদের পোস্টটি পড়ার মাঝে উপকৃত হয়েছেন। ক্যালেন্ডার সম্পর্কিত এমন আরো পোস্ট করতে আমাদের ওয়েবসাইটের হোমপেজ ভিজিট করুন।

আরও পড়ুনঃ ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা সম্পর্কে ১১ টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নিন
 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অমৃতা ব্লগারের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url