গর্ভাবস্থায় কোন পাশ হয়ে ঘুমানো উচিত
গর্ভাবস্থার মায়েদের জন্য
ঘুম একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ জিনিস এই সময় ঘুম ঠিকভাবে না হলে তাদের মেজাজ
খিটখিটে থাকে এবং শরীরও খারাপ হয়। প্রেগনেন্সিতে যদি ঘুমের সমস্যা হয় তাহলে মা
ও বাচ্চার উভয়েরই ক্ষতির সম্ভাবনা আছে এই সময় হবু মায়েদের জন্য অনাগত শিশুর
আগমন নিয়ে অতিরিক্ত উত্তেজনা কাজ করে।
গর্ভাবস্থায় মায়েদের জন্য দীর্ঘ নয় মাসের যাত্রা থাকে নানা বিস্ময় পূর্ণ
পরিবারের জন্য এটি একটি উত্তেজনাময় পূর্ণ সময় যেহেতু তারা নতুন সদস্যকে স্বাগত
জানাতে চলেছে মা হওয়ার এই যাত্রায় সেই জন্য নানা সমস্যার মোকাবেলা করতে হয়
গর্ভবতী মায়েদের। এই সময় গর্ভবতী মায়েদের বিভিন্ন ধরনের অস্বস্তি বোধ হতে পারে
বিশেষ করে ঘুমানোর সময়। ঘুমানোর সময় কোন পাশে ঘুমানো সঠিক এবং কোন পাশে ঘুমালে
কি হয় এই সম্পর্কিত আজকে আলোচনা করব।
সূচিপত্রঃ গর্ভাবস্থায় ঘুমানোর এবং চলা ফেরার কিছু সুবইধা-অসুবিধা
- গর্ভাবস্থায় ডানপাশে ঘুমালে কি হয়
- গর্ভাবস্থায় কত ঘন্টা ঘুমানো উচিত
- গর্ভাবস্থায় বেশি ঘুমালে কি হয়
- গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে কি হয়
- গর্ভাবস্থায় বেশি ঘুম পায় কেন
- গর্ভাবস্থায চিত হয়ে ঘুমালে কি হয়
- গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে
- গর্ভাবস্থায় কিভাবে বসা উচিত
- গর্ভাবস্থায় পেটের বাম পাশে ব্যথা হলে করণীয় কি
- গর্ভাবস্থায় ডানপাশে ঘুমানো নিয়ে লেখকের শেষ কথা
গর্ভাবস্থায় ডানপাশে ঘুমালে কি হয়
গর্ভাবস্থায় ডান পাশে ঘুমালে কি হয় সে সম্পর্কে আজকে জেনে নেওয়া যাক। গর্ভাবস্থায় মায়েদের অনেকগুলো সমস্যার মধ্যে একটি অন্যতম হলো ঘুম নিয়ে সমস্যা। কারণ এই সময় পেটের আকৃতি ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে ফলে মায়েদের ঘুমের সমস্যা হয়। অস্থিরতা লাগে দমবন্ধ হয়ে আসে এবং ঘুমও ভেঙ্গে যায়।
এই সেজন্যই অনেক চিকিৎসকী রয়েছে যারা গর্ভবতী নারীদের বাম পাশ ফিরে ঘুমানোর জন্য পরামর্শ দেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠতে পারে ডান পাশে কাত হয়ে ঘুমালে কিংবা চিৎ হয়ে ঘুমালে সমস্যা কোথায়? হ্যাঁ, সমস্যা অবশ্যই রয়েছে চলুন সেই সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। গর্ভাবস্থায় মায়েদের বাম কাত হয়ে ঘুমানোর মেডিকেল কারণ আবিষ্কার হয়েছে। যেহেতু গর্ভকালে ভ্রুন দিন দিন বড় হতে থাকে তাই এটি স্বাভাবিকভাবেই তার মায়ের অভ্যন্তরীণ অর্গান ও রক্তনালিতে বেশি থেকে বেশি চাপ ফেলে এটি।
বিকাশ মান শিশু যখন মায়ের পেটে লাথি দেয় বা চাপড় মারে তখন গর্ভাবস্থায় মায়েদের ব্যথা অনুভূত হতে পারে কিন্তু এই ধরনের অভিজ্ঞতা থেকে আপনাকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে বাম পাশ ফিরে ঘুমানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছেন মানে আপনাকে অবশ্যই ডান পাশে ঘুমাতে হবে। গর্ভবতী মহিলাদের তাদের বাম দিকে ঘুমাতে বলা হয় এই জন্যই।
বাম দিকে ঘুমালে হৃদপিণ্ড ভ্রুণ জরায়ু এবং কিডনির মধ্যে রক্ত প্রবাহ উন্নত হয়। এটি আপনার লিভার থেকে চাপও রাখে। যদি আপনার বাম নিতম্ব খুব অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে তবে কিছুক্ষণের জন্য আপনি ডান দিকে সুইচ করতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা আরো বলেছেন গর্ভকালের শেষ তিন মাস বাম কাত হয়ে ঘুমানো উচিত। ব্রিটেনে প্রায় এক হাজার নারীর উপর চালানো এক সমীক্ষায় দেখা গেছে পিঠের উপর চিত হয়ে ঘুমালে মৃত শিশু জন্ম দানের ঝুঁকি দ্বিগুণ বেড়ে যায়।
গবেষণায় ২৯১ জন গর্ভবতী নারীর ওপর নজর রাখা হয়েছিল যারা মৃত শিশুর জন্ম
দিয়েছেন এবং ৭৩৫ জন নারী জন্ম দিয়েছেন জীবিত শিশু। গর্ভাবস্থায় ডানদিকে ঘুমানো
নিরাপদ বলে মনে করা হয়। তবে বামদিকে ঘুমানোর মতো এটি ততটা উপকারী নয়। আপনার বাম
দিকে ঘুমানো আপনার ডান দিকে ঘুমানোর চেয়ে ভালো কারণ এটি যকৃতের উপর কম চাপ ফেলে
এবং প্লাস প্লাসেন্টায় রক্ত প্রবাহ বাড়ান এবং ব্রণের বিকাশে কম কার্যকর হতে
পারে।
গর্ভাবস্থায় কত ঘন্টা ঘুমানো উচিত
গর্ভাবস্থায় মায়েদের সবথেকে প্রয়োজনীয় একটি কাজ হল সঠিক নিয়মে ঘুমানো। কারণ সঠিক ভাবে যদি ঘুম না হয় গর্ভাবস্থায় মায়েদের তাহলে এতে মা এবং শিশু দুজনেরই অধিক ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি থেকে থাকে। আপনাদের অনেকেরই প্রশ্ন থাকতে পারে যে ঠিক কত ঘন্টা ঘুমানো উচিত এই অবস্থায়। আসুন সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করি।
আরও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না
বিশেষজ্ঞরা বলেন গর্ভবতী মায়েদের বিশ্রাম নেওয়াটা জরুরী। গর্ভাবস্থায় সময় অন্ততপক্ষে ১০ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত সেটা রাতের বেলা ৮ ঘন্টা ও দিনের বেলা দুই ঘন্টা ঘুমানোর প্রয়োজন। গর্ভাবস্থায় মা বিশ্রাম নিলে তার শরীর ভালো থাকে এবং নবজাতকের শরীরের রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়। গর্ভাবস্থায় মায়েদের ঘুমের স্থান হতে হবে কোলাহলমুক্ত আরামদায়ক কম আলো কিন্তু ভালো বাতাস চলাচল করে এমন ধরনের স্থান। এই সময়ে ভালো ঘুমের জন্য আরো কিছু পরামর্শ আপনাদের দেওয়া হল।
- এই সময় সব সময় ঢিলেঢালা নরম এবং পরিষ্কার আরামদায়ক পোশাক পরিধান করা উচিত
- খাবারের সাথে সাথে ঘুমানো ঠিক না একটু বসা বা হাটা উচিত
- ঘুমানোর আগে চা বা কফি জাতীয় খাবার খাওয়া যাবেনা
- ঘুমের অন্তত এক ঘণ্টা আগে এক গ্লাস দুধ খাওয়া ভালো
- প্রতিদিন ৩০ মিনিট হালকা ব্যায়াম সঠিক সময়ে ঘুমাতে সাহায্য করবে তবে এ সময় ভারী ব্যায়াম করা যাবে না
- ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত এক ঘন্টা আগে যেকোনো ডিভাইস থেকে নিজেকে দূরে রাখুন
- আরামদায়ক বালিশ ব্যবহার করতে হবে
- পায়ের নিচে ও পিঠের নিচে বালিশ দিলে পা ও কোমরের ব্যথা থেকে আরাম পাওয়া যায়
- ঘুমোতে অসুবিধা জন্য পেটে নরম বালিশ দিয়েও ঘুমানো যায়
এই সকল উপায় অবলম্বন করলে গর্ভাবস্থায় মায়েদের ঘুমানোর ক্ষেত্রে ভালো হয়। এতে
দ্রুত ঘুম আসে এবং এ সকল নিয়ম গুলো মানলে মা এবং বাচ্চার দুজনের জন্যই ভালো। তাই
সঠিক ঘুম এবং সুস্বাস্থ্যর জন্য উপরে দেওয়া টিপসগুলো অবশ্যই অবলম্বন করতে হবে।
গর্ভাবস্থায় বেশি ঘুমালে কি হয়
গর্ভাবস্থায় মায়েদের জন্য যেমন ঘুম খুবই প্রয়োজনীয় একটি জিনিস সঠিকভাবে ঘুম না হলে বাচ্চা এবং মায়ের দুজনেরই ক্ষতি হয়। ঠিক তেমনি অতিরিক্ত ঘুমালেও এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। আসুন জেনে নেওয়া যাক গর্ব অবস্থায় বেশি ঘুমালে ঠিক কি কি সমস্যা হয়। গর্ভাবস্থায় মায়েদের হরমোন পরিবর্তনের কারণে ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারেন এছাড়া গর্ভাবস্থায় মহিলাদের অতিরিক্ত ওজন বহন করতে হয়।
যার ফলে বিশ্রাম ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না গর্ভাবস্থায় প্রচুর বিশ্রাম এবং ঘুম
হওয়াটা স্বাভাবিক তবে অতিরিক্ত ঘুমের শিশুর জন্য ক্ষতি করতে পারে আবার ঘুম ভালো
না হলেও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি হয়ে থাকে তাই একজন গর্ভবতী মহিলাকে অবশ্যই জানতে
হবে গর্ভাবস্থায় বেশি ঘুমালে কি হয় এবং গর্ভাবস্থায় ঘুমানোর নিয়ম সম্পর্কে।
নিচে গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে যা যা সমস্যা হয় সে সম্পর্কিত কিছু কথা
উল্লেখ করা হলো।
- মৃত প্রসবের সম্ভাবনা বেড়ে যায়
- নরমাল ডেলিভারি না হওয়ার সম্ভাবনা অধিক হয়
- নিজের শরীরের ওজন আরো বেশি বৃদ্ধি পায়
- শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়
- পিঠের নিচে দিকে ব্যথা অনুভূত হয়
- একটানা উপর বা চিৎ হয়ে শোয়ার কারণে গর্ভের শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হয়
- সন্তানের মাথা বড় হয়ে যায়
- সন্তানের নিচের দিকে নামতে না পারা
অন্ততপক্ষে শেষের গর্ভাবস্থায় তিন মাস ঘুমানোর সময় অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন
করতে হবে তা না হলে মা এবং শিশু উভয়ের স্বাস্থ্যের জন্যই ক্ষতি হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে কি হয়
গর্ভাবস্থায় মায়েদের বিশ্রাম নেওয়াটা প্রয়োজন। তবে বিশ্রাম নিতে গিয়ে বেশি শুয়ে থাকলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে। গর্ভাবস্থায় মায়েদের অবশ্যই হাটাহাটি করার প্রয়োজন রয়েছে। গর্ভাবস্থায় মায়েদের বেশি শুয়ে থাকলে বর্ধিত ঝুঁকি ব্রুনের রক্ত সঞ্চালন এবং অক্সিজেন সরবরাহে সম্ভাব্য ব্যাঘাতের জন্য দায়ী করা যেতে পারে।
তাই গর্ভাবস্থায় সুস্থ থাকতে বেশি শুয়ে থাকা কখনোই যাবে না। এ সময় হাঁটাহাঁটির প্রয়োজন রয়েছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক কতক্ষণ হাঁটা উচিত গর্ভাবস্থায় মায়েদের জন্য। নারীর গর্ভকালীন সময়ে প্রথম দুই তিন মাস অবশেষে তিন মাস অতিরিক্ত পরিশ্রম না করে হালকা হাঁটাচলা করা উচিত। ভারী জিনিস বহন করা বা তোলা থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকতে হবে।
আরও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা বুদ্ধিমান হয়
পিচ্ছিল স্থানে হাঁটা যাবে না এবং সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় বিশেষ সর্তকতা অবলম্বন
করতে হবে। এই সময় দিনের বেলা কমপক্ষে দু'ঘণ্টা ঘুম বা বিশ্রাম এবং রাতে কমপক্ষে
৮ ঘন্টা ঘুমানো টা খুবই প্রয়োজন এবং আবশ্যক। গর্ভাবস্থায় মায়েদের অবশ্যই দিনে
এক থেকে দুইবার হাটাহাটি করা প্রয়োজন। তাই এই সময় সব সময় শুয়ে না থেকে একটু
হাঁটাচলা করাটা গর্ভাবস্থায় মা এবং শিশু দুজনেরই জন্য ভালো।
গর্ভাবস্থায় বেশি ঘুম পায় কেন
গর্ভাবস্থায় মায়েদের ঘুমানোর একটা নিয়ম রয়েছে। যে বয়সে বেশিরভাগ মহিলারা গর্ভবতী হয়ে থাকেন সেই সময় তাদের প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ঘুমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু যদি আপনি নিজেকে নিয়মিত ভাবে এর থেকে বেশি সময়ের উপরে টানা ভালোভাবে ঘুমাতে দেখেন তবে সম্ভবত আপনি অতিরিক্ত ঘুমাচ্ছেন বুঝতে হবে। এছাড়াও যদি রাতে বেশ কয়েকবার হাঁটাহাঁটি করেন বা ঘুমের অভ্যাসে ব্যাঘাত ঘটান।
তবে আপনাকে স্বাভাবিকের চেয়ে বিছানা পরীক্ষায় আরও বেশি সময় ব্যয় করতে হতে
পারে। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় ক্লান্তি বোধ হওয়াটা একটি খুবই সাধারণ ঘটনা। সাধারণত
প্রথম ত্রৈমাসিকের সময় আপনার রক্তের পরিমাণ এবং প্রোজেক্টেরণের মাত্রা বৃদ্ধি
পায়। যা আপনার ঘুমের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে। এবং তৃতীয় ত্রৈমাসিকের মধ্যে
শিশুর অতিরিক্ত ওজন বহন করা এবং প্রসবের কাছাকাছি আসার মানসিক উদ্যোগ আপনাকে
বিছানায় কিছু অতিরিক্ত সময় কাটাতে উৎসাহিত করতে পারে।
গর্ভাবস্থায় চিত হয়ে ঘুমালে কি হয়
গর্ভাবস্থায় মায়েদের ঘুমানোর অবস্থান পরিবর্তন করা কোন ভুল নেই। আপনি ঘটনা ক্রমে আপনার পিঠে বা আপনার ডান দিকে শুয়ে থাকতে পারেন এবং আপনি আরামদায়ক না হওয়া পর্যন্ত এটি ঠিক আপনার ইচ্ছামত শুয়ে থাকতে পারেন। তবে সম্ভবত আপনার চিত হয়ে শুয়ে থাকলে গর্ভাবস্থায় আপনার এবং আপনার নবজাতকের জন্য খুবই ক্ষতিকর হতে পারে।
বিশেষ করে গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসের পর থেকে চিৎ হয়ে শোয়ার ফলে জড়ায়ুতে রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হতে পারে ফলে আপনার মাথা ঘুরাতে পারে এমনকি শিশু শরীরের রক্ত প্রবাহ কমে গিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়াও চিৎ হয়ে শোয়ার কারণে গর্ভাবস্থার সময়ে পিঠে ব্যথা হেমোরয়েড হজমের সমস্যা এবং দুর্বল রক্ত সঞ্চালনসহ এমন নানা সমস্যা সম্মুখীন হতে হয়।
আরও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কি কি কাজ করা নিষেধ
এজন্য এ সময়ে একপাশে অর্থাৎ ডান অথবা বাম দিকে কাত হয়ে ঘুমালে সেটি সবচেয়ে ভালো। সারারাত ধরে ঘুমের মধ্যে শোয়ার ভঙ্গি পরিবর্তন করাটা স্বাভাবিক সুতরাং গর্ভাবস্থায় চলাকালীন চিত অবস্থা হয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠলে আতঙ্কিত না হয়ে ঘুমের মধ্যে শরীরের অসামঞ্জস্য জনিত অস্বস্তি এ রাতেই ঘুম ভেঙ্গে গেছে। অর্থাৎ আপনি সম্ভবত অনেকক্ষণ সেই ভঙ্গিতে ছিলেন না।
যাইহোক তৃতীয় ত্রৈমাসিক চলাকালীন চিত হয়ে শুলে কিন্তু অবশ্যই রক্ত প্রবাহ
ব্যাহত হয় ফলে দ্রুত আপনার শরীরে অস্বস্তি বোধ হতে পারে এবং আপনি জেগে যেতে
পারেন। সুতরাং নিজের সন্তানের শরীরের রক্ত প্রবাহের কথা মাথায় রেখে বেশিক্ষণ চিত
হয়ে কখনোই শোয়া উচিত নয়। কখন কিভাবে কতবার আপনার ঘুম ভেঙ্গে যাচ্ছে সেদিকে
খেয়াল রাখতে বলুন নিজের সঙ্গীকে।
গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে
একজন নারী যখন গর্ভধারণ করে তখন সেই নারীর গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটে কোন পাশে থাকে তা নির্ভর করে বিভিন্ন বিষয়ের উপর। যেমন সেই নারীর শারীরিক গঠন গর্ভের অবস্থান এবং গর্ভে থাকা বাচ্চার আকার ইত্যাদি বিষয় সমূহ দেখে। বিশেষজ্ঞদের মতে গর্ভাবস্থায় পেটের যেকোনো পাশে বাচ্চা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
সময়ের সাথে সাথে গর্ভে থাকা বাচ্চার আকার আকৃতি পরিবর্তন হতে থাকে সেই সাথে আকার পরিবর্তন হওয়ার পর বাচ্চাটি নড়াচড়া করতে থাকে। আসলে সেই ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট করে কখনোই বলা সম্ভব নয় গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটে কোন পাশে থাকে। তবে স্বাভাবিকভাবে গর্ভাবস্থায় প্রথমের দিকে বাচ্চা পেটের মাঝে থাকে।
আরও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে তলপেটে ব্যথা হয় কেন
যখন ধীরে ধীরে সময় অতিক্রম হয় বাচ্চাটি আকার আকৃতি বড় হয় এবং বৃদ্ধি পেতে
থাকে তখন একজন গর্ভাবস্থা মায়ের জরায়ু আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেতে থাকে ঠিক সেই
সময় বাচ্চাটিও পেটের বিভিন্ন স্থানে নড়াচড়া করতে থাকে। সেজন্য ঠিকভাবে বলা
যায় না গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটে কোন পাশে এক্সাক্টলি থাকে।
গর্ভাবস্থায় কিভাবে বসা উচিত
গর্ভাবস্থায় সময় যাওয়ার সাথে সাথে পেটের মধ্যে শিশুর আকার আকৃতি ও বৃদ্ধি পায়। সেই ক্ষেত্রে একজন গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরের ভিতরে বিভিন্ন পরিবর্তন দেখা দেয় এবং অতিরিক্ত বসে থাকা বা শুয়ে থাকা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হয়ে যায়। বেশিক্ষণ বসে থাকলে পিঠের মেরুদন্ডের উপর চাপ হারাস করার জন্য বসার সঠিক ভঙ্গিমা গুলি অবলম্বন করাটা জরুরী।
আসুন গর্ভাবস্থায় কিভাবে বসা উচিত সেই সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা
যাক।
- বসার সময় সব সময় আপনার পিঠ সোজা রাখতে হবে এবং আপনার চারটি পিছনে টেনে নিচে নামাতে হবে আর নিতম্ব গুলি চেয়ারের পিছনে স্পর্শ হওয়া প্রয়োজন।
- আপনার পায়ের পাতা মেঝের উপর সমান ভাবে রাখতে হবে
- বসার জন্য শক্ত পিঠের দিকটা সোজাভাবে সমর্থনযোগ্য এমন একটা চেয়ার বেছে নিতে হবে অতিরিক্ত সহায়তার জন্য আপনার কোমরের পিছন দিকটাই রাখতে পারেন একটা নরম বালিশ অথবা একটা ছোট তোয়ালে। ১পায়ের পাতা গুলো উঁচু করে রাখার জন্য একটা ছোট্ট টুল রাখতে পারেন এটি কোমর এবং পিঠের উপর পড়া অতিরিক্ত চাপ কমায়
- একটানা বসে থাকলে একটু উঠে হাঁটাহাঁটি করা বা পায়ের পাতার ব্যায়াম করা যেতে পারে কাজের ক্ষেত্রে আপনার ডেক্সে বসার সময় আপনার বসার চেয়ারটিকে এমন এক উচ্চতায় সামঞ্জস্য করুন যাতে আপনার টেবিলের সমান থাকতে পারে
- বসার আরেকটা ভালো অবস্থান হতে পারে চেয়ারের ধার বরাবর বসে পুরোপুরি অবনীত হওয়া তারপর নিজেকে আস্তে আস্তে তুলে ধরুন। এবং আপনার পিঠের বক্রতাকে যতটা সম্ভব উচ্চ করুন এভাবে কয়েক সেকেন্ড ধরে রাখুন। এবার অবস্থানটি সামান্য শিথিল করুন আপনার উভয় নিতম্বের ও প্রয়োজনটা সমান ভাবে ভাগ করে নেওয়া নিশ্চিত করুন।
- গর্ভাবস্থায় তৃতীয় ত্রয়ী মাসিকে বসার একটি অবস্থান হিসেবে ভালো কাজ করতে পারে ভারসাম্য বজায় কারী বল।
- মেঝের উপর বসার সময় আপনার হাঁটু গুলিকে মরে এবং গোড়ালি গুলিকে একসাথে সংযুক্ত করে সোজা হয়ে বসুন
গর্ভাবস্থায় পেটের বাম পাশে ব্যথা হলে করণীয় কি
গর্ভাবস্থায় ইউটেরাসের হার গুলো প্রসারণ এর ফলে মূলত পেটে ব্যথা হয়ে থাকে। ভ্রুন যত বৃদ্ধি পেতে থাকে তত ইউটেরাস এর আভ্যন্তরীণ পর্দায় চাপ সৃষ্টি হয়। দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের সময় থেকে পেটে দুই পাশে ব্যথা হওয়াটা স্বাভাবিক। যদি আপনার বাম দিকে কিছুটা ব্যথা হয় তাহলে বুঝতে হবে যে ইউটেরাসদের ডানদিকে কোন পরিবর্তন ঘটেছে।
এছাড়াও গর্ভাবস্থায় পেটের বাম পাশে ব্যাথার আরও একটি কারণ হতে পারে আপনার গর্ভাশয় প্রসারিত হচ্ছে। এবং এর ফলে লিগামেন্ট গুলি প্রসারিত হতে পারে এটি আপনার নিচের পেটে কুঁচকিতে বা নিতম্বের এক উভয় পাশে ব্যথার কারণ হতে পারে। আপনার যদি একই রকম ব্যথা হয় তবে আপনার জিপি প্রস্তুতি বিশেষজ্ঞ বা মিড ওয়াইফের দ্বারা পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস সহবাস করা যাবে কি
তবে গর্ভাবস্থায় পেটের বামদিকের ব্যথা নিয়ে যদি অতিরিক্ত ভোগে থাকেন তাহলে
অবশ্যই ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। গর্ভাবস্থায় অল্প ব্যথা থাকা ভালো কারণ তাতে
বোঝা যাবে সে সাধারণ বৃদ্ধি ঘটছে। কিন্তু ব্যাথা সাথে সাথে জ্বর রক্তপাত এবং
অন্যান্য লক্ষণ অনুভূত হলে শীঘ্রই ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন।
গর্ভাবস্থায় ঘুমানো নিয়ে লেখকের শেষ কথা
গর্ভাবস্থায় মায়েদের জন্য দীর্ঘ নয় মাসের যাত্রা থাকে নানা বিস্ময় পূর্ণ
পরিবারের জন্য এটি একটি উত্তেজনাময় পূর্ণ সময় যেহেতু তারা নতুন সদস্যকে স্বাগত
জানাতে চলেছে মা হওয়ার এই যাত্রায় সেই জন্য নানা সমস্যার মোকাবেলা করতে হয়
গর্ভবতী মায়েদের। এই সময় গর্ভবতী মায়েদের বিভিন্ন ধরনের অস্বস্তি বোধ হতে পারে
বিশেষ করে ঘুমানোর সময়। গর্ভাবস্থায় ডান-কাত হয়ে ঘুমানো নিরাপদ বলে মনে করা হয় তবে বামদিকে ঘুমানোর
মতো এটি ততটা উপকারী নয় আপনার বাম দিকে ঘুমানো আপনার ডানদিকে ঘুমানোর চেয়ে ভালো
একটি কারণ হতে পারে যকৃতের উপর কম চাপ ফেলে এবং ভ্রুনের বিকাশে কম
কার্যকর হতে পারে। আশা করছি আপনি ওপরের পোস্ট টি পড়ার মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন। লাইফস্টাইল সম্পর্কিত এমন আরও পোস্ট পড়তে আমাদের হোমপেজে ভিজিট করুন।
অমৃতা ব্লগারের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url