কাঁচা ছোলা খাওয়ার ১০টি উপকারিতা ও অপকারিতা
কাঁচা ছোলা খুবই উপকারী এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। কাঁচা ছোলা রান্না করে কিংবা
সিদ্ধ করে যেকোনো ভাবেই খেতে পারেন আপনি। এতে রয়েছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স।
যা বেরিবেরি রোগ, মস্তিষ্কের রোগ সহ আরো অন্যান্য রোগের বিরুদ্ধেও কাজ করে থাকে।
ভিটামিন বি ছাড়াও এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি ও রয়েছে।
সূচিপত্রঃ কাঁচা ছোলা সম্পর্কে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নিন
- কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা
- কাঁচা ছোলা খাওয়ার নিয়ম
- সিদ্ধ ছোলা খাওয়ার উপকারিতা
- রান্না করা ছোলার উপকারিতা ও অপকারিতা
- সকালে খালি পেটে ছোলা খাওয়ার নিয়ম
- ছোলা বুট খেলে কি মোটা হওয়া যায়
- ছোলার ক্ষতিকর কয়েকটি দিক
- কাঁচা ছোলা যেভাবে খাবেন
কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা
সকালে অনেকেই আমরা কাঁচা ছোলা খেয়ে থাকি কিন্তু আমরা কি জানি এই কাঁচা ছোলার উপকারিতা সম্পর্কে। চলুন আজকে জেনে নেওয়া যাক কাঁচা ছোলার কিছু উপকারী দিক সম্পর্কে। ছোলা একটি উচ্চ মাত্রার প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার।
এতে ভিটামিন, ফাইবার, প্রোটিন তিনটিই রয়েছে। প্রতি গ্রাম ছোলায় আমিষ প্রায় ১৮ গ্রাম, কর্বোহাইট্রেড প্রায় ৬৫ গ্রাম, ফ্যাট মাত্র ৫ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২০০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-এ প্রায় ১৯২ মাইক্রগ্রাম রয়েছে। কাঁচা ছোলায় রয়েছে কমপ্লেক্স কর্বহাইট্রেড, প্রোটিন এবং ফাইবার।
যা হজম প্রক্রিয়া ধীর করে এবং সাথে শরীরের শর্করা শোষণ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা
করে।
আবার স্বাস্থ্যউজ্জ্বল চুল পেতে কাঁচা ছোলার গুনাগুণ রয়েছে। কারণ এতে
রয়েছে ভিটামিন এ, বি৬, জিঙ্ক এবং মেঙ্গানিজ। আর এই সকল উপাদান চুল ভালো রাখতে
সাহায্য করে।
প্রতিদিন সকালে কাঁচা ছোলা খেলে চুলের অকালপক্বতা রোধ হবে। এছাড়াও গর্ভবতী
মায়েদের জন্যও ছোলা খুবই উপকারী একটি খাবার। আয়রন সমৃদ্ধ কাঁচা ছোলা
হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা উন্নত করতে সাহায্য করে। এই জন্য গর্ভবতী এবং যারা
আ্যনিমিয়ায় ভুগছেন তাদের জন্য খুব উপকারী কাঁচা ছোলা।
কাঁচা ছোলা ভিজিয়ে আদার সঙ্গে খেলে শরীরে আমিষ ও এন্টিবায়োটিকের চাহিদা পূরণ
হয়। আমিষ মানুষের শরীরকে শক্তিশালী করে তোলে এবং এন্টিবায়োটিক রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা বাড়ায়।
কাঁচা ছোলা খাওয়ার নিয়ম
কাঁচা ছোলা থেকে আমরা অনেক বেশি ফাইবার সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন পেয়ে থাকি। ছোলা কাঁচা অথবা সেদ্ধ করে খাওয়া হলে সম্পূর্ণ পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়। ছোলা বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যায় তবে কাঁচা ছোলা খাওয়ার ও কিছু নিয়ম রয়েছে। ছোলা খাওয়ার আগে অবশ্যই ভিজিয়ে রাখতে হবে।
না ভিজিয়ে সরাসরি খেলে এটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি করে। কাঁচা ছোলা খেতে হলে এটি কে সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হবে অথবা ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পরে খেতে হবে। প্রতিদিন সকাল বেলায় কাঁচা ছোলা খাওয়া শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
সকালে খালি পেটে কাঁচা ছোলা খেলে খুব দ্রুত কাজ করে আমাদের শরীরে। সারা রাত ছোলা
ভিজিয়ে রাখার পরে সকালে উঠে খালি পেটে এক মুঠ ছোলা খাওয়া যথেষ্ঠ আমাদের শরীরের
জন্য। তবে মনে রাখবেন অতিরিক্ত ছোলা একসাথে খালি পেটে কখনোই খেতে যাবেন না এতে
শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
সিদ্ধ ছোলা খাওয়ার উপকারিতা
অনেকে আছে যারা কাঁচা ছোলা একেবারেই খেতে পারেনা। তাদের জন্য সিদ্ধ করে ছোলা খাওয়ার সুযোগ রয়েছে। সিদ্ধ ছোলা খেলে খিদে নিয়ন্ত্রণ হয়। ছোলাতে বিদ্যমান প্রোটিন এবং ফাইবার ক্ষুদা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। সিদ্ধ ছোলাতে অধিক পরিমাণে ক্যালোরি বিদ্যমান
তাই এটি আমাদের শরীরের ক্যালোরি প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে সহায়তা করে থাকে। তবে
সাধারণত মসলায় রান্না করা ছোলার চেয়ে কাঁচা ছোলায় এন্টি অক্সিডেন্ট বেশি থাকে।
যারা কাঁচা ছোলা খেতে পারে না তাদের জন্য অবশ্যই সিদ্ধ ছোলা একেবারেই উপযোগী একটি
খাবার।
রান্না করা ছোলার উপকারিতা ও অপকারিতা
ছোলায় প্রচুর পরিমাণে আঁশ রয়েছে। মসলা যোগ করে ছোলা তেলে রান্না করলে ক্যালরির পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই যারা ক্যালরি বাড়াতে চাই তাদের জন্য রান্না করা ছোলা অনেক উপযোগী হবে। এক কাপ ছোলায় রয়েছে ৫৯৭ ক্যালরি, ১৯ গ্রাম প্রোটিন, ৪ গ্রাম ফ্যাট, ৬০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১৭২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১০ মিলিগ্রাম আয়রন, ১৮৮ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম।
তবে যারা ওজন বাড়াতে চান না কিংবা যাদের আলসার আছে তাদের রান্না করা ছোলা না
খাওয়াই ভালো। আবার অতিরিক্ত তেল মশলা যুক্ত করে রান্না করার ফলে নষ্ট হয়ে যায়
এর পুষ্টিগুণ। অতিরিক্ত তেল অনেকক্ষণ রান্নার ফলে নষ্ট হয়ে যায় এর পুষ্টিগুণ।
তাই রান্না করা ছোলার চেয়ে কাঁচা বা সেদ্ধ ছোলা অনেক বেশি উপকারী।
সকালে খালি পেটে ছোলা খাওয়ার নিয়ম
সকালে খালি পেটে ছোলা খেলে বেশি কার্যকর হয়। এর জন্য আমাদের রাতে এক মুঠ পরিমাণ ছোলা একটি পরিষ্কার পাত্রে সারারাত ভিজিয়ে রাখার জন্য ঢেকে রাখতে হবে। এবং পরের দিন সকাল বেলায় খালি পেটে ভেজানো ছোলা খাওয়া যেতে পারে।
কাঁচা ছোলার জায়গায় সিদ্ধ ছোলাও চাইলে খেতে পারেন। তবে কাঁচা ছোলায় পুষ্টিগুণ বেশি পাওয়া যায়। এটি খেলে শরীরের প্রোটিনের ঘাটতি দুর হয়। এছাড়াও আপনি যদি রক্তস্বল্পতায় ভোগেন তবে আপনার ডায়েট এ অবশ্যই ছোলা যোগ করুন।
এটি আয়রন সমৃদ্ধ এবং শরীরের হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে। ভেজানো কালো
ছোলায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা পরিপাকতন্ত্রের উন্নতিতে সাহায্য করে। এটি
আপনার শরীর থেকে সমস্ত ক্ষতিকারক টক্সিন বের করে পরিপাকতন্ত্র কে সুস্থ রাখে।
ছোলা বুট খেলে কি মোটা হওয়া যায়
মোটা হওয়ার প্রথম ধাপ হলো পুষ্টিকর এবং ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার এটি আমিষের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস। ছোলায় আমিষের পরিমাণ মাংস বা মাছের আমিষের পরিমাণের প্রায় সমান। তাই মোটা হওয়ার জন্য খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন ছোলা রাখতে পারেন।
প্রতি ১০০ গ্রাম ছোলায় আছে প্রায় ১৭ গ্রাম আমিষ বা প্রোটিন, ৬৪ গ্রাম শর্করা এবং ৫ গ্রাম ফ্যাট। ছোলার কার্বোহাইড্রেটের গ্লাইমেসিক ইনডেক্স কম। যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী তাই নিয়মিত ছোলা খেয়ে শরীরের ওজন বৃদ্ধি করা সম্ভব।
ছোলার ক্ষতিকর কয়েকটি দিক
ছোলায় প্রচুর পটাশিয়াম থাকে। তাই কিডনিতে সমস্যায় আক্রান্তদের জন্য ছোলা ক্ষতিকর হতে পারে। পেটে ব্যাথা থাকেলও ছোলা খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। কাঁচা ছোলা ভেঁজে খাওয়া একেবারেই ঠিক নয়। এবং যাদের বমির সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য কাঁচা ছোলা না খাওয়া টাই ভালো।
এছাড়াও অনেকেরই ওজন বেশি রয়েছে তাদের অবশ্যই ছোলা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
কারণ অতিরিক্ত তেল মশলা তাদের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। আবার হজম করতে না পারলেও
কাঁচা ছোলা খাওয়া উচিত নয়। এছাড়াও যাদের রক্তের ডায়ালসিস চলছে, যাদের শরীরের
কিটেনিন ও ইউরিক এসিডের পরিমাণ বেশি রয়েছে তারা যেকোনো রকমেরই ছোলা খাওয়া থেকে
বিরত থাকুন।
কাঁচা ছোলা যেভাবে খাবেন
কাঁচা ছোলা সারা রাত ভিজিয়ে রাখুন। সকাল বেলা কাঁচা ছোলা ধুয়ে পরিষ্কার করে খেতে পারেন। যারা প্রথম অবস্থায় কাঁচা ছোলা খেতে পারবেন না তারা সিদ্ধ করেও খেতে পারেন এবং আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে গেলে পরে কাঁচা ছোলা খেতে পারেন। আপনি প্রতিদিন অন্তত একটি পরিবেশন ২৪ গ্রাম ছোলা খেতে পারেন। দিনে ৭০ গ্রামের বেশি খাবেন না কারণ এটি প্রতিকূল পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। আপনি যদি অনেক বেশি ছোলা খান তাহলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আপনি পেতে পারেন যার মধ্যে রয়েছে ফোলাভাব, বমি বমি ভাব এবং গ্যাস।
আরও পড়ুনঃ
ড্রাগন ফলের খোসার উপকারিতা
এই ছোলা বাড়িতে রান্না করেও খেতে পারেন। এইভাবে কাঁচা ছোলা খেয়েও যদি কোনো
ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে তবে অবশ্যই চিকৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ এটি শরীরের
জন্য যেমন উপকারী তেমন এটি নিয়ম মেনে না খেলে শরীরের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর ও
হয়ে থাকে।
লেখকের শেষ কথা
উপরে সম্পূর্ণ পোস্ট জুড়ে কাঁচা ছোলার উপকারিতা অপকারিতাসহ এটি কিভাবে খাওয়া যায়। এবং কাদের জন্য খাওয়া নিষিদ্ধ এই সকল বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি নিয়ম মেনে না খেলে শরীরের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর ও হয়ে থাকে। আশা করছি আপনি কাঁচা ছোলার সম্পর্কে আমাদের পোস্টটি পরে উপকৃত হবেন। লাইফস্টাইল সম্পর্কিত এমন আরও নতুন নতুন পোস্ট পড়তে আমাদের হোম পেজে ভিজিট করুন ধন্যবাদ।
অমৃতা ব্লগারের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url