ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েলের ১০টি গুনাগুণ


অলিভ অয়েলের সাথে আমরা সবাই পরিচিত। প্রাকৃতিক উপাদান জলপাই থেকে তৈরী হওয়া এই অলিভ অয়েল রান্নার পাশাপাশি ত্বক এবং চুল এর যত্নে বেশ কার্যকরী। অলিভ অয়েলে রয়েছে বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য যা প্রাকৃতিকভাবে ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নতিতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে এবং ত্বককে হাইড্রেটেড করে বিশেষ সুরক্ষা প্রদান করে। 

অলিভ অয়েল রান্নার পাশাপাশি ত্বক এবং চুল এর যত্নে বেশ কার্যকরী। তবে ত্বকের যত্নে আমরা কেনই বা অলিভ অয়েল ব্যবহার করব এবং অলিভ অয়েলের ১০টি গুনাগুণ সম্পর্কে আজকে আমরা বিস্তারিত জেনে নিবো অমৃতা ব্লগারে। 

সূচিপত্রঃ ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েলের ১০টি গুনাগুণ 

এন্টি অক্সিডেন্ট সুরক্ষা

এন্টিঅক্সিডেন্ট এর বৈশিষ্ট্য ত্বকের সুরক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে এবং অলিভ অয়েলে এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এতে ভিটামিন ই এবং পলিফেনল এর মতো এন্টিঅক্সিডেন্ট আছে যা ত্বককে ফ্রি রেডিকেলের কারণে হওয়া অক্সিডিটেড ক্ষতিসমূহ থেকে রক্ষা করে এবং ত্বকের বার্ধক্যের ছাপ হ্রাস করে। অলিভ ওয়েলের এই এন্টিঅক্সিডেন্ট এর বৈশিষ্ট্য ত্বককে বিশেষভাবে সুরক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ থেকেও রক্ষা করে। 

ময়েশ্চারাইজেশন

অলিভ অয়েল প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। এবং অলিভ অয়েল এর মধ্যে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। এটি ত্বককে পুষ্টি জোগাতে সাহায্য করে এবং এতে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে। এতে আরো রয়েছে প্রাকৃতিক ইমোলিয়েন্ট যা ত্বককে ভেতর থেকে হাইড্রেটেড রেখে শুষ্কতা প্রতিরোধ করে এবং ত্বকের সুরক্ষায় আদ্রতার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এই অলিভ অয়েলকে ত্বকের সুরক্ষায় একটি প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজারও বলা যায়।

রোদে পোড়া ভাব দূরীকরণ

আমাদের ত্বকের রোদে পোড়া ভাব দূর করার জন্য অলিভ অয়েল অন্যতম। অনেক সময় ধরে ত্বক রোদে পোড়ার কারণে ত্বকে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ দেখা দেই এবং অস্বস্তির সৃষ্টি হয়ে থাকে। আমাদের ত্বক অনেক কালো হয়ে যায় এবং বিভিন্ন ডার্ক সার্কেল ও দেখা এইসকল সমস্যা দূরীকরণ এ অলিভ অয়েল অনেক কার্যকরী।

 

ব্রন উপশম

ব্রন আমাদের প্রায় সবার জন্যই একটি সাধারণ সমস্যা। বিশেষ করে টিনেজাররা এই সমস্যায় ভুগে বেশি। নিয়মিত সঠিক পদ্ধতিতে ত্বক পরিষ্কার না করা, চকলেট, ফাস্টফুড, বাইরের খাবারের প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরতা এবং হরমোন পরিবর্তনের কারণে এই সময়ে বেশি ব্রন হয়। আর এই ব্রন উপশম করতে বা ব্রন নিরাময়ে অলিভ অয়েল বিশেষভাবে সাহায্যকর করে। অলিভ অয়েলে রয়েছে এন্টি মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য যা ব্রন যুক্ত ত্বকে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। এবং ব্রন উপশম করে বা ব্রন হওয়ার প্রবণতাকে কমিয়ে দেয়। তবে এই ক্ষেত্রে অবশ্যই ত্বকে স্বল্প পরিমাণে অলিভ ওয়েল ব্যবহার করতে হবে যাতে করে ত্বকের ছিদ্র আটকে না যায় এবং ত্বক সুরক্ষিত থাকে।


এন্টি ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য

অলিভ অয়েলে ত্বকের সুরক্ষায় উপকারী বৈশিষ্ট্য গুলো ছাড়াও রয়েছে এন্টি ইনফ্লেমেটরি। যা স্ফীত ত্বককে প্রশমিত করে এবং একজিমার মতো বিভিন্ন চর্মরোগ থেকে ত্বককে রক্ষা করে থাকে। অলিভ ওয়েলের এই এন্টি ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য ত্বকের বিভিন্ন চর্মরোগ দূর করে ত্বককে সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। এই ধরনের চর্মরোগ দূরীকরণে তাই অলিভ অয়েল বিশেষ কার্যকরী উপাদান হিসেবে কাজ করে থাকে।

কিউটিকল এর যত্নে

কিউটিকল এর যত্নে অলিভ অয়েল অন্যতম একটি উপাদান। যা কেউটিকলকে নরম এবং ময়েশ্চারাইজার করতে সহায়তা করে। অলিভ অয়েল নিয়মিত এবং সঠিক পরিমাণে ব্যবহার করলে আমাদের ত্বক ভালো থাকবে। 
তবে এই ক্ষেত্রে স্বল্প পরিমাণে অলিভ অয়েল ব্যবহার করলেই তা শুষ্ক এবং ফাটা কিউটিকল প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে থাকে। এবং ত্বককে বিশেষভাবে সুরক্ষা দিয়ে থাকে।

দাগ দূরীকরণ

আমাদের ত্বকের মধ্যে অনেক ধরনের দাগ লক্ষ্য করে থাকি আমরা অথবা লেট নাইট ঘুমানোর জন্য আমাদের চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল পরে যায় এই সকল সমস্যা থেকে সমাধান পেতে অলিভ অয়েল খুবই কার্যকরী। ত্বক থেকে এই ধরনের দাগ দূর করতে দাগের মধ্যে অলিভ অয়েল হালকা ভাবে ম্যাসাজ করতে হবে। এর ময়েশ্চারাইজেশন এবং পুনরুৎপাদনকারী বৈশিষ্ট্য গুলোর কারণে সময়ের সাথে সাথে
 দাগ গুলো হালকা হয়ে এক সময় মিলিয়ে যাবে ত্বকের সাথে। নির্দিষ্ট সময়ের পর ত্বক থেকে দাগ দূরীকরণে বিশেষ ভাবে সহায়তা করে অলিভ অয়েল।

মেকআপ রিমুভার

বাজারের কেনা রিমুভার এর থেকে অলিভ অয়েল একটি প্রাকৃতিক মেকআপ রিমুভার হিসেবে কাজ করে। ত্বকে আলতো ভাবে অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে খুব সহজেই মেকআপ রিমুভ করা যায়। তবে মেকআপ রিমুভার হিসেবে অলিভ অয়েল ব্যবহার করার সময় অবশ্যই অল্প পরিমাণে ব্যবহার করতে হবে যাতে করে ত্বকের ছিদ্র বন্ধ হয়ে না যায়। এবং ব্রন হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি না পায়।

এক্সফলিয়েশন

প্রতি ২৭ দিন পরপর ত্বকের মৃত কোষ উঠে গিয়ে সেখানে জন্ম নেই নতুন কোষ। কিন্তু এই মৃত কস ত্বকের সাথে আলগা ভাবেই লেগে থাকে ফলে ত্বক বিবর্ণ এবং নিষ্প্রাণ দেখায়। নিয়মিত এক্সফলিয়েশন এর মাধ্যমে ত্বকের মৃত কোষ তুলে না ফেললে ত্বকের নানা সমস্যা দেখা দেয়। আর ত্বকের এক্সফলিয়েশনএর জন্য অলিভ অয়েল একটি অন্যতম উপাদান যা প্রাকৃতিক ভাবে ত্বকের ডেড সেল দূর করে ত্বককে ভেতর থেকে উজ্জ্বল এবং মসৃণ করতে সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও অলিভ অয়েলকে চিনির সাথে মিশিয়ে ঘরে বসেই একটি ডাই এক্সফলিয়েশন স্ক্রাব তৈরি করা যায় যা নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের মৃত কোষ দূর হয়ে ত্বক ভেতর থেকে উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত দেখায়।

ত্বকের সুরক্ষা

আমাদের ত্বককে প্রাকৃতিক ভাবে সুরক্ষিত রাখতে অলিভ অয়েল একটি কার্যকরী উপাদান হিসেবে কাজ করে। ত্বককে সুন্দর রাখতে নিয়মিত অলিভ অয়েলের ব্যবহার প্রয়োজন। সঠিক পরিমাণে নিয়মিত অলিভ অয়েল ব্যবহারে ত্বকের স্বাস্থ্য প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বলতা ও মসৃণতা প্রদান করে। তবে একটা কথা অবশ্যই আমাদের মনে রাখতে হবে অলিভ অয়েল অতিরিক্ত ব্যবহার করা যাবেনা কখনোই এতে করে ত্বকের সমস্যা হতে পারে। তাই অলিভ অয়েল পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যবহার করতে হবে ত্বকে।

অলিভ অয়েল ব্যবহার করার নিয়ম

অলিভ অয়েল গোসলের পর ভিজা ত্বকে  লাগালে ত্বক সহজেই তেল শুষে নেবে এবং পুষ্টি পাবে। অথবা রাতে ঘুমানোর  আগে ভালোভাবে মুখ ধোয়ার পর সামান্য অলিভ অয়েল মুখে এবং গলায় লাগিয়ে নিলে ত্বক কোমল ও মসৃণ হবে। অলিভ অয়েলকে বিভিন্ন ভাবে ব্যাবহার করা যাই তার মধ্যে কয়েকটি উপায় এখানে উল্লেখ করা হল।

মধু এবং অলিভ অয়েল

উপকরণঃ ১টেবিল চামচ অলিভ অয়েল, ১চা চামচ মধু, ১টি ডিমের কুসুম ৷

একটি পাত্রে অলিভ অয়েল, মধু এবং ডিমের কুসুম একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। এই পেস্টটি মুখে লাগিয়ে 15 মিনিট রাখুন এরপর জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এর সুবিধা ময়েশ্চারাইজিংয়ের পাশাপাশি মধুতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যও রয়েছে ৷ যা ত্বককে সুস্থ রাখতে এবং এর উজ্জ্বলতা বাড়াতে কার্যকর। অলিভ অয়েলের সঙ্গে ব্যবহার করলে অনেক ধরনের ইনফেকশনও সেরে যায়। এতে উপস্থিত ডিমের কুসুম ফ্রি-র‌্যাডিক্যালের কারণে হওয়া ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে।

লেবু এবং অলিভ অয়েল

উপকরণঃ ১টেবিল চামচ অলিভ অয়েল,১টেবিল চামচ লেবুর রস ৷

অলিভ অয়েল এবং লেবুর রস দুটোই ভালো করে মিশিয়ে নিন। পুরো মুখে লাগিয়ে দুই থেকে তিন মিনিট আলতো করে মাসাজ করুন। মুখে লাগিয়ে 30 মিনিট রেখে দিন। তারপর হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

এর সুবিধাঃ লেবুতে উপস্থিত ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। এটি শুধুমাত্র ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় না, এটি ত্বকের ক্ষতি এবং সূর্যের আলো থেকেও রক্ষা করে।

অতিরিক্ত কুমারি জলপাই তেল

উপকরণঃ ১টেবিল চামচ এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল, একটি নরম কাপড় (মুখের কাপড়), গরম পানি।

তালুতে কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল নিন। এটি দিয়ে মুখে বৃত্তাকার গতিতে মাসাজ করুন। তেলটি মুখে সঠিকভাবে শুষে যাওয়ার সুযোগ দিন। তারপর একটি পরিষ্কার সুতির কাপড় গরম জলে ডুবিয়ে ছেঁকে নিন। এই কাপড়টি মুখে লাগিয়ে আলতো করে চেপে রাখুন ৷ খেয়াল রাখবেন জল যেন খুব গরম না হয়। এই প্রক্রিয়াটি দুই থেকে তিনবার করতে হবে। তারপর শুকনো কাপড় দিয়ে মুখ মুছে নিন।

এর সুবিধাঃ গরম জল দিয়ে মুখে এমন ট্রিটমেন্ট দিলে মুখের ছিদ্রগুলি খুলে যায় ৷ যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং তাকে আরও কম বয়সি দেখায়।

লেখকের শেষ কথা 

আজকের এই পোস্টে আমরা ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েলের ১০টি গুনাগুণ সম্পর্কে জেনেছি। অলিভ অয়েলে কি কি গুন রয়েছে এবং আমাদের ত্বকের জন্য অলিভ অয়েল কতোটা উপকারি সেই সব সম্পর্কে জেনেছি। এবং ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েল কিভাবে ব্যাবহার করতে হয় সেইতাও জেনেছি। আশা করছি আপনি ওপরের পোস্টটি পরে বুঝতে পেরেছেন অলিভ অয়েলের গুনাগুন সম্পর্কে। এবং কিভাবে ব্যাবহার করবেন ত্বকে সেই সব। 

এখন থেকে আমরা আমাদের ত্বকের যত্ন নিব নিয়মিত এবং অলিভ অয়েল সঠিকভাবে ব্যাবহার করব। আমরা যদি নিয়মিত অলিভ অয়েল ব্যাবহার করি তাহলে আমাদের ত্বক উজ্জ্বল এবং ম্রস্রিন হবে। অলিভ অয়েলে রয়েছে বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য যা প্রাকৃতিকভাবে ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নতিতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে এবং ত্বককে হাইড্রেটেড করে বিশেষ সুরক্ষা প্রদান করে। অলিভ অয়েল গোসলের পর ভিজা ত্বকে  লাগালে ত্বক সহজেই তেল শুষে নেবে এবং পুষ্টি পাবে।  

 

 আরও পরুনঃ কলার উপকারিতা ও অপকারিতা

 


   

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অমৃতা ব্লগারের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url